কিশোরগঞ্জের বড় হাওর
পানি ওঠেনি, কমেছে চাষির খরচ
পানি না থাকায় হাওরের চারণভূমিতে শত শত গরু-মহিষ কাঁচা ঘাস আর লতাপাতা খেয়ে বেড়ে উঠছে। এতে কৃষকদের খরচ কমেছে।
বর্ষা শুরু হলেও কিশোরগঞ্জের বড় হাওরসংলগ্ন আশপাশের এলাকায় এবার এখনো পানি ওঠেনি। বোরো ধান কাটার পর সে জমিতে জন্মেছে ঘাস ও লতাপাতা। সে চারণভূমিতে শত শত গরু-মহিষ কাঁচা ঘাস আর লতাপাতা খেয়ে বেড়ে উঠছে। এতে কৃষকদের খরচ কমেছে। অন্যদিকে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে এসব গরু–মহিষ বিক্রি করে তাঁরা ভালো লাভের আশা দেখছেন।
গত বৃহস্পতিবারের হাওরপারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। মাঝ বরাবর চলে গেছে আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। পথের দুই প্রান্তে বিস্তৃত খোলা মাঠে শত শত গরুর অবাধ বিচরণ। সেখানে গরু দেখভাল করছিলেন হেলেনা আক্তার (৫০)। ২৫ বছর ধরে হাওরের খোলা মাঠ ঘুরে গরু লালনপালন করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। নিকলী উপজেলার কারপাশা এলাকায় তাঁর বাড়ি।
হেলেনা বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে এসেছেন। এরপর এক মেয়েকে নিয়ে তিনি গরু লালনপালন করে টিকে আছেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন একাকী সংসারে আছেন। গত কোরবানিতে দুটি ষাঁড় দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেছিলেন। এবার প্রায় এক লাখ টাকা মূল্যের একটি গাভি আছে তাঁর। ভালো দাম পেলে এটাও বিক্রি করে দেবেন। এরপর কয়েকটি ছোট গরু কিনে লালনপালন করে সামনের বছরের কোরবানির জন্য প্রস্তুত করবেন।
এলাকার লোকজন বলেন, হাওরের বিস্তীর্ণ এসব জমি থেকে এক-দেড় মাস আগে ধান কেটে নিয়েছেন কৃষকেরা। এখন পতিত এসব জমিতে জন্মেছে তরতাজা ঘাস আর লতাপাতা। অন্য বছর এ সময়টাতে হাওরে পানি এলেও এবার এখনো পানি আসেনি। তাই গরু লালন পালনকারী অসংখ্য কৃষকের এবার বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন।
চারণভূমিতে আসা কয়েকজন কৃষক বলেন, বড় হাওরে নিকলীর মজলিশপুর, বদরপুর, কারপাশা, সিংগুয়ার, উত্তর হাটি, গৌরিপুর, শহরমূল, ভাটি নানস্রী এবং করিমগঞ্জের খয়রত, বারুক, নলী বিল এলাকার কৃষকেরা তাঁদের গরু নিয়ে আসেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, তাঁর চারটি দেশি জাতের ষাঁড় আছে। যেগুলো কোরবানিতে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিক্রির আশা করছেন। অন্যান্য বছর ধান কাটা শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে হাওরে পানি চলে আসত। এবার এখনো পানি না আসায় যাঁদের গরু আছে, তাঁরা গরুকে তাজা ঘাস খাওয়ানোর জন্য দেড় থেকে দুই মাস সময় পাচ্ছেন। এতে করে গরু-মহিষ পালনকারী কৃষকদের খরচ বাঁচার পাশাপাশি পশুগুলো দ্রুত বাড়ছে।
শামিম মিয়া তাঁর ৮টি গরুকে চারণভূমিতে ছেড়ে রাখেন। তিনি বলেন, হাওরের এমন কৃষক খুব কমই আছেন, যাঁদের ঘরে দু-চারটা গরু-ছাগল-মহিষ থাকে না। বর্ষায় তাঁরা গরুকে শুকনা খড়, খইল, ভুসিসহ অন্য খাবার দেন। এতে কৃষকদের খরচ বেশি পড়ে। তবে এবার পানি দেরিতে আসায় তাঁদের সে খরচটা হচ্ছে না।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, হাওরে বিস্তীর্ণ মাঠে ঘাস খেয়ে দেশি গরু লালনপালন করে বেশ লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। এবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৯৫ হাজার ৩৯৫টির। জেলার পাঁচ হাজারের বেশি খামারির কাছে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৩৮টি কোরবানির পশু প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে গরু আছে ৭৩ হাজার ৫৪টি।