চুয়েট বন্ধ থাকছে ৯ মে পর্যন্ত, হল ছাড়ার নির্দেশ স্থগিত

সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) অনির্দিষ্টকালের পরিবর্তে আগামী ৯ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশনাও স্থগিত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩৩তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল কক্ষে সিন্ডিকেটের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে একাডেমিক কাউন্সিলের ১৫১তম জরুরি সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সভা শেষে রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে ছাত্রদের এবং আজ শুক্রবার সকাল নয়টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গত সোমবার দুই সহপাঠীর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর থেকে বিক্ষোভ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কয়েক দফায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কও অবরোধ করে রাখেন। এর মধ্যেই গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও হল ছাড়ার সিদ্ধান্তে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বর ও মূল ফটকে থাকা শাহ আমানত পরিবহনের দুটি বাসে আগুন দেন। এ অবস্থায় রাত সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় ১১টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী ২০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। এরপর হল ছাড়ার বিষয়ে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিতে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সিন্ডিকেটের সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে ৯ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে শিক্ষার্থীরা শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে হলে অবস্থান করতে পারবেন। এর ব্যতিক্রম ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী সময়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’

গত সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে বাসের ধাক্কায় পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা (২২) ও দ্বিতীয় বর্ষের তৌফিক হোসাইন (২১) নিহত হন। আহত হন আরেক শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু (২১)। চুয়েটের কাছাকাছি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার জিয়ানগর এলাকায় পৌঁছালে তাঁদের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় বেপরোয়া গতির শাহ আমানত পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস।

দুর্ঘটনার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। গত সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় প্রথম দফায় সড়ক অবরোধ করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাস। পাশাপাশি আরও দুটি বাস ভাঙচুর করা হয়। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে রাত নয়টার দিকে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীর। সেদিন রাত তিনটায় নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করা হয়। এরপর গত মঙ্গলবার প্রায় ১৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার সকাল ১০টা থেকে আবারও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর বৃহস্পতিবার আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করা হলে রাত ১১টায় তুলে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের অবরোধ।