অভ্যুত্থানের ফায়দা লুটছে তথাকথিত কিছু রাজনীতিবিদ: সারজিস

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরের চৌরাস্তা বাজারের তেঁতুলতলায় চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, সিন্ডিকেট, দুর্নীতির বিরুদ্ধে পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধার উদ্দেশ্যে লংমার্চের পথসভায় বক্তব্য দেন এনসিপি নেতা সারজিস আলম। শনিবার সন্ধ্যায়ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আপনাদের স্পষ্ট করে একটা কথা বলে দিই, এই অভ্যুত্থানে কয়জন বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছেলেমেয়ে জীবন দিয়েছে, একবার হিসাব করে দেখবেন। এই অভ্যুত্থানে জীবন দিয়েছে আপনার আমার মতো সাধারণ মানুষেরা, শ্রমিকেরা আর তাঁদের সন্তানেরা। মাঝখান দিয়ে ফায়দা লুটছে তথাকথিত কিছু রাজনীতিবিদ।’

শনিবার সন্ধ্যায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরের চৌরাস্তা বাজারের তেঁতুলতলায় চাঁদাবাজি, দখলদারত্ব, সিন্ডিকেট, দুর্নীতিসহ সব অপকর্মের বিরুদ্ধে পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধার উদ্দেশে লংমার্চের পথসভায় সারজিস আলম এ কথাগুলো বলেন।

এনসিপির এই নেতা বলেন, প্রতিটি জেলা–উপজেলায় পাঁচ থেকে দশজন চাঁদাবাজ, চোরাকারবারি, সিন্ডিকেট চালনাকারী, মাদক ব্যবসায়ী, বাটপার মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জেলা–উপজেলায় ঠিক এ কারণেই নেমেছি। কারণ, আপনাদেরকে নতুন করে আবার সচেতন হতে হবে।’

বক্তব্যে পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরিণতি তুলে ধরেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, নবাব সিরাজউদ্দৌলার বাহিনীতে ৫০ হাজারের অধিক সৈন্য ছিল, হাজার হাজার-লাখ লাখ মানুষ ওই বাহিনীর সমর্থনে ছিল, কিন্তু মাত্র দুই-তিন হাজার ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে পরাজিত হতে হয়েছিল। কারণ, সবাই নিষ্ক্রিয় দর্শকের মতো তাকিয়ে ছিল। ওই মানুষগুলো যদি একটা করে ঢিলও ছুড়ত, তাহলে ব্রিটিশদের কাছে ২০০ বছরের জন্য এই বাংলার স্বাধীনতা হারাতে হতো না। আজকেও একই অবস্থা। তিনি বলেন, ‘আপনার তেঁতুলিয়ায় দশ-পাঁচটা লোক মিলে রক্ত চুষে খাচ্ছে আর আপনারা নীরব দর্শকের মতো ভয়ে ঘরে বসে থাকেন, চুপ করে থাকেন।’

তেঁতুলিয়ায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের কড়া সমালোচনা করে সারজিস আলম বলেন, ‘যেদিন আপনার ঘরের নিচে ওই ড্রেজিং মেশিন দিয়ে তোলা পাথরগুলো সরে যাবে, আপনার ঘর দেবে যাবে, পাঁচ বছরেও আপনার ঘর ঠিক করতে পারবেন না, বৃষ্টির দিনে আপনার ঘরে পানি পড়বে, সেদিন আপনার নেতা আপনার ঘরের দিকে তাকাবে না। একটা জিনিস মনে রাখবেন, সোনার হাঁস থেকে প্রতিদিন একটা ডিম আসুক সমস্যা নাই, সনাতন পদ্ধতিতে বালু-পাথর তোলেন সমস্যা নাই। কিন্তু একদিনে যদি সব ডিম পাইতে চান, ড্রেজিং মেশিন যদি বসাইতে দেন, দশটা লোককে প্রতিদিন রাতে ১০ লাখ টাকা তাদের পকেটে ঢুকাইতে দেন, কয়েক দিন পরে আপনার ঘর আর ঘর থাকবে না, সব দেবে যাবে, আপনার ফসলি জমিতে আর ফসল হবে না। আপনারা নিজেরা সচেতন না হলে কেউ আপনাদেরকে সচেতন করবে না।’

এনসিপির পঞ্চগড় জেলার আয়োজনে শনিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জেলার ঐতিহাসিক চিনিকল মাঠ থেকে বাংলাবান্ধার উদ্দেশে শুরু হওয়া এই লংমার্চের নেতৃত্ব দেন সারজিস আলম। এতে এনসিপির পাঁচ উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারীরা ছাড়াও এনসিপি ও জাতীয় যুবশক্তির নেতা–কর্মীরা অংশ নেন।