নড়াইলের সেই কলেজ খুলেছে, যাননি লাঞ্ছিত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার

নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজ
ছবি: সংগৃহীত

নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজ ঈদের ছুটির পর আজ রোববার খুলেছে। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কলেজে যাননি। শিক্ষার্থীরাও কলেজে যাননি। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে কলেজশিক্ষক ও কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এদিকে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় করা মামলায় পুলিশ আরেক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে।

কলেজশিক্ষক ও কর্মচারীরা বলেন, কলেজে প্রায় সাড়ে ৩০০ শিক্ষার্থী আছেন। চালু আছে এইচএসসি ও স্নাতক শ্রেণি। আজ কলেজে খুললেও কোনো শিক্ষার্থী কলেজে যাননি। যাননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসও। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, নড়াইল সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. সাজেদুল ইসলাম, মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম আজ কলেজে এসে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এডিএম জুবায়ের হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, কলেজ আজ রোববার খুলেছে। হয়তো শিক্ষার্থীরা জানতে পারেননি, তাই আসেননি। শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে কলেজের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। কীভাবে আগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে কথা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার থেকে শুধু দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে অন্য ক্লাস শুরু হবে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কয়েক দিন পর কলেজে যাবেন। শিক্ষার্থীদের ফোন করে বা ব্যক্তিগত যোগাযোগ করে কলেজে আনা হবে।

পুলিশ জানায়, শিক্ষককে অপদস্ত করার ঘটনায় আরেক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বয়স ১৭ বছর। সে কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ওই ছাত্র অধ্যক্ষের মোটরসাইকেলসহ তিন শিক্ষকের মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পোড়ানোর সঙ্গে জড়িত। গতকাল শনিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই অভিযোগে গত শুক্রবার কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রায়হান শেখকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক–তদন্ত (ওসির দায়িত্বে) মো. মাহমুদুর রহমান জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখে সর্বশেষ একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আজ দুপুরে নড়াইল শিশু আদালতে সোপর্দ করা হয়। আর রায়হানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ রোববার নড়াইলের আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদা এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আরও পড়ুন

গত ১৮ জুন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে। আগের দিন ১৭ জুন ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুকে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার পক্ষে ছবিসহ একটি পোস্ট দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস ওই শিক্ষার্থীর বাবাকে ডাকেন। আলোচনা করেন কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে।

আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী, কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে তাদের কাছে সোপর্দ করা হয়। পুলিশের সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যেতে চাইলে উত্তেজিত ছাত্র ও বহিরাগত কয়েকজন বাধা দেন। তখন পুলিশ সুপার (এসপি) ও জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিষয়টি জানানো হয়। বিকেল চারটার দিকে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং ওই শিক্ষার্থীকে কলেজের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে বের করা হয়। নিচতলার কলাপসিবল গেটের সামনে আনার পর তাঁদের গলায় জুতার মালা পরানো হয়।