দখলমুক্ত ফুটপাত, মানুষের স্বস্তি

ফুটপাতের অধিকাংশ অংশই হকারমুক্ত। এতে স্বস্তিতে চলাচল করতে পারছেন নগরবাসী। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনেছবি: দিনার মাহমুদ

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়ক। এই সড়কের দুই পাশের ফুটপাত ১৫ দিন আগেও ছিল হকারদের দখলে। নিত্যদিন হকাররা ফুটপাতে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসতেন। পণ্য বেচাকেনার কারণে ফুটপাতে মানুষের ভিড় লেগে থাকত। এতে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলা কষ্টকর হয়ে পড়ত নগরবাসীর। দিনের পর দিন ভোগান্তি নিয়ে নগরবাসীকে যাতায়াত করতে হতো। সেই বঙ্গবন্ধু সড়কসহ অধিকাংশ সড়কের ফুটপাত এখন প্রায় ফাঁকা।

প্রশাসন ও পুলিশের কঠোর তৎপরতায় ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করা হয়েছে। ফলে স্বস্তি নিয়ে ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারছেন নগরবাসী। তবে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদাবাজির হাতছানি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে ফুটপাত হকারমুক্ত ধরে রাখাকে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন নগরবাসী। শহরের আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আকমল হোসেন বলেন, এখন ফুটপাত হকারমুক্ত থাকায় ভোগান্তি ও যানজট কমেছে।

আমাদের ফুটপাতে বসতে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। যদি বসতে না দেয়, তাহলে তারা আমাদের পুনর্বাসন করুক।
আবদুর রহিম মুন্সি, হকার নেতা

৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে গোলটেবিল বৈঠকে অবৈধ যানবাহন ও ফুটপাত হকারমুক্ত রাখার বিষয়ে সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান এবং প্রশাসন ঐকমতে পৌঁছায়। ওই বৈঠকের পরদিনই ফুটপাত থেকে হকার তুলে দেওয়া শুরু করে পুলিশ। ফাঁকা ফুটপাত দিয়ে অনেকটা স্বস্তি নিয়ে চলাফেরা করতে পারছেন নগরবাসী। তবে নগরের প্রধান বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত থেকে সরে গেলেও আশপাশের অলিগলিতে হকাররা অবস্থান নিয়েছেন। মূল সড়কে বিকেলের পর থেকে আবারও হকাররা বসতে পাঁয়তারা করছেন।

মুষ্টিমেয় কিছু হকারের কারণে নগরের বাসিন্দাদের ভোগান্তি কাম্য হতে পারে না বলে মত দিয়েছেন নগরবাসী ও ব্যবসায়ীরা। পানোরামা প্লাজার ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ বলেন, আবার হকাররা ফুটপাতে বসার পাঁয়তারা করছেন। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে আরও কঠোর হতে হবে।

সরেজমিন দেখা যায়, শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া সোনালী ব্যাংক, সমবায় মার্কেট, সায়াম প্লাজা ও সাধারণ বীমা করপোরেশনের ভবনের সামনে সড়কের অধিকাংশ ফুটপাত ফাঁকা। আগে এসব স্থানে কয়েক শ হকার বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ফুটপাতে বসতেন। ফলে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলাচল করে যেত না। এখন পুলিশের টহল ও কঠোরতায় হকারদের সেই দৌরাত্ম্য কমেছে। তবে এসব পয়েন্টের বেশ কিছু স্থানে হকার বসতে দেখা গেছে।

ফুটপাত ফাঁকা হওয়ায় সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে আছে। এতে আমরা ব্যবসায়ীও খুশি। আমরা চাই এই ধারা অব্যাহত থাকুক।
শামীম আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক, জেলা দোকান মালিক সমিতি

শহরের চাষাঢ়া মোড়ের ভাসমান দোকানগুলো ল্যাবএইডের গলির ভেতরে ও পাশে বাগে জান্নাত মসিজদের গলির ভেতরে ঢুকেছে এবং কিছু হকার চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় ঢুকেছেন। এতে ওই এলাকাগুলোয় যানজটসহ ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। হকাররা মূল সড়কের ফুটপাতে বসার পাঁয়তারা করছেন। তাঁরা উচ্ছেদের প্রতিবাদ ও পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন হকার এই প্রতিবেদককে জানান, আগে হকার নেতারা ফুটপাতের প্রত্যেক হকারের কাছ থেকে ৫০–১০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করতেন। সেই টাকার ভাগ পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা ও হকার নেতারা পেতেন। ৩ ফেব্রুয়ারির পর থেকে তাঁদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে না, ফুটপাতে বসতেও দেওয়া হচ্ছে না।

হকার নেতা আবদুর রহিম মুন্সি বলেন, ‘আমাদের ফুটপাতে বসতে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। যদি বসতে না দেয়, তাহলে তারা আমাদের পুনর্বাসন করুক। আমরা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’

ফুটপাত হকারমুক্ত রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, দুই সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান এবং প্রশাসনকে অভিনন্দন জানিয়ে মিছিল করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা দোকান মালিক সমিতি। জেলা দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফুটপাত ফাঁকা হওয়ায় সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে আছে। এতে আমরা ব্যবসায়ীও খুশি। আমরা চাই এই ধারা অব্যাহত থাকুক।’

নগরবাসীর স্বার্থে ফুটপাত হকারমুক্ত ও সড়ক যানজটমুক্ত রাখতে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এটা পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রশাসনকে এটা ধরে রাখতে হবে। রাজনৈতিক ও পুলিশ প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।

ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় সব করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ফুটপাত দিয়ে জনসাধারণ যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন, সে বিষয়ে পুলিশের একাধিক টহল দল ও অতিরিক্ত পুলিশ কাজ করছে। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা বাস্তবায়নে পুলিশ প্রয়োজনে আরও কঠোর হবে।