বাউফলে আওয়ামী লীগের তিনটি পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, সংঘাতের আশঙ্কা

২০১২ সাল থেকে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে পৃথক দুটি দলীয় কার্যালয় ব্যবহার করে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছিলেন দলের নেতা–কর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনটি পক্ষ একই দিনে একই সময়ে কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। এর মধ্যে দুটি পক্ষের কর্মসূচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে (জনতা ভবন) ও আরেকটি পক্ষের কর্মসূচি বাউফল প্রেসক্লাব সড়কের পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগ আরেকাংশের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

পাল্টাপাল্টি এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা করছেন দলের নেতা–কর্মী ও স্থানীয় লোকজন। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমিন বলেন, ‘বিষয়টি অবগত হওয়ার পর উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারলে পরিবেশ শান্ত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৭ মার্চ স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে (জনতা ভবন) সকাল নয়টায় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের পক্ষের নেতা–কর্মীরা কেক কাটা ও আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করেছেন। আ স ম ফিরোজ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আছেন। ওই অনুষ্ঠান উপলক্ষে ১৩ মার্চ থেকে আ স ম ফিরোজের পক্ষে জন্মদিন পালন ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক ইব্রাহিম ফারুক স্বাক্ষরিত দাওয়াতপত্র বিতরণ করা হয়। ওই দাওয়াতপত্রে ইব্রাহিম ফারুক নিজেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করেছেন।

এর আগে ৯ মার্চ একই ধরনের কর্মসূচি আয়োজনের কথা জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার স্বাক্ষরিত একটি দাওয়াতপত্র বিতরণ করা হয়। ওই দাওয়াতপত্রে দেখা গেছে, একই দিনে, একই সময়ে, একই স্থানে, একই ধরনের কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন মোতালেব। এ ছাড়া মেয়র জিয়াউল হকের নেতৃত্বে উপজেলা ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের আরেকটি পক্ষ একই দিনে একই সময়ে বাউফল প্রেসক্লাব সড়কের পাশে দলীয় আরেকটি অংশের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও শিশু দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

দলের একাধিক নেতা–কর্মী আশঙ্কা করছেন, ১৭ মার্চ পাল্টাপাল্টি এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে এর আগেও সংঘাত, এমনকি প্রাণহানির নজির আছে বাউফলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, ওই দিন সব পক্ষই অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মাঠে থাকবে। সংঘর্ষ বাধলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন ফরাজি বলেন, প্রশাসন শক্ত না হলে ফের সংঘর্ষ ও হানাহানির আশঙ্কা আছে।

এর আগে ২০২০ সালের ২৪ মে বাউফল থানা-সংলগ্ন সড়কের ওপর তোরণ নির্মাণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে তাপস কুমার দাস নামের এক যুবলীগ কর্মী নিহত হন। ২০২২ সালের ৬ মে আ স ম ফিরোজ–সমর্থিত পক্ষ ও আবদুল মোতালেবের সমর্থিত পক্ষ একই স্থানে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে পৃথক দুটি দলীয় কার্যালয় ব্যবহার করে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছিলেন দলের নেতা–কর্মীরা। একটি কার্যালয় উপজেলা আদালত ভবনের অদূরে জনতা ভবন। আরেকটি বাউফল থানার পশ্চিম পাশে বাউফল প্রেসক্লাব সড়কের পাশে। এক পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন আ স ম ফিরোজ ও আবদুল মোতালেব হাওলাদার। অপর পক্ষে ছিলেন বাউফল পৌরসভার মেয়র জিয়াউল হক এবং সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুজিবুর রহমান। কিন্তু ২০২১ সালে আ স ম ফিরোজ ও আবদুল মোতালেবের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে তিন ভাগে বিভক্ত হয় উপজেলা আওয়ামী লীগ। তবে জিয়াউল ও মোতালেব একসঙ্গে কোনো কর্মসূচি না করলেও তাঁদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই বলে তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা দাবি করেছেন।

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে মোতালেব হাওলাদার বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রশাসনকে অবহিত করেছি। তবে উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্যতীত অন্য পদের অনুমোদন নাই। তাই সাধারণ সম্পাদক কর্মসূচি ঘোষণা করার পর একই স্থানে একই সময়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে কেউ কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন না। এটা অসাংগঠনিক।’

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের সমর্থিত বাউফল পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি (একাংশ) ইব্রাহিম ফারুক বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক সভা করে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।’

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে জেলার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (বাউফল সার্কেল) শাহেদ আহম্মেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ প্রশাসন সব সময় তৎপর। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটে, এমন কার্যক্রম থেকে সবার সরে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।