মেঘনায় বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় জেলেদের নৌকাডুবি, একজন নিখোঁজ
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় মেঘনা নদীতে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় ছয় জেলেসহ একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেছে। এ ঘটনায় পাঁচ জেলে সাঁতরে রক্ষা পেলেও নিখোঁজ রয়েছেন এক জেলে। আজ সোমবার সকালে উপজেলার চরকিশোরগঞ্জের মোল্লারচরসংলগ্ন নদীতে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিখোঁজ ওই জেলের নাম মোহাম্মদ শরীফ (৩২)। তিনি মুন্সিগঞ্জ শহরের দক্ষিণ ইসলামপুর এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও নিখোঁজের স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, শরীফ গত ছয় মাস আগে মুরগির দোকানে কাজ করতেন। সেখানে কাজের সুবিধা না থাকায় ছয় মাস ধরে স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে মাছ ধরার কাজ করছিলেন। প্রতিদিন ভোরের দিকে পদ্মা-মেঘনায় কাঠের ট্রলারে মাছ ধরতে যেতেন তিনি। আজ ভোরে স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যান। সকালে শহরের মোল্লারচর এলাকার পাশে মেঘনা নদীতে মাছ ধরছিলেন শরীফসহ অন্য জেলেরা। ওই সময় বালুবাহী একটি বাল্কহেড ট্রলারের ওপর উঠিয়ে দেয়। এতে ট্রলারটি মুহূর্তের মধ্যে নদীতে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া ট্রলার থেকে পাঁচজন তীরে সাঁতরে উঠেন, তবে নিখোঁজ হন শরীফ।
স্থানীয় লোকজন জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসকে জানান। খবর পেয়ে মুন্সিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ সফিকুল ইসলাম। আজ দুপুরে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নদীতে পানির গভীরতা ও স্রোত বেশি থাকায় উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তারপরও ডুবুরি দল সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, অভিযান চলবে।
দুর্ঘটনাটি বাল্কহেডচালকদের আইন না মানা ও উদাসীনতার কারণে ঘটেছে বলে জানান দুর্ঘটনা থেকে জীবিত ফিরে আসা জেলে রিপন হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত নদীতে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ। তাই আমরা জেলেরা নিরাপদে রাতে মাছ ধরতে যাই। অথচ এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাল্কহেড দিন-রাত সমান তালে চলাচল করছে। কারও কোনো নজর নেই। আজ ভোরে যখন বাল্কহেড আমাদের দিকে আসছিল, আমাদের ট্রলারের চতুর্দিকে কচুরিপানা ছিল। আমরা ট্রলার সরাতে পারিনি। তখন আমরা বাঁচার জন্য অনেক চিল্লাপাল্লা করি। সেদিকে কোনো নজর না দিয়েই বাল্কহেড আমাদের ট্রলারের ওপরে উঠিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের ট্রলার নদীতে ডুবে যায়। তীরে সাঁতরে উঠে দেখি শরীফ নেই।’
এদিকে শরীফ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে শরীফকে খুঁজছেন তাঁর স্বজনেরা। শরীফ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাঁর বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শরীফের ভাইয়ের স্ত্রী আসমা বেগম বলেন, ‘শরীফের এক বছরের একটি বাচ্চা রয়েছে। মাছ বিক্রি করে সে সংসার চালায়। তার নিখোঁজের খবর শুনে আমাদের পরিবারের সব লোকজন নদীর দিকে ছুটে গেছে। শরীফকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।’