কুষ্টিয়ায় ঝুলছিল সত্তরোর্ধ্ব স্বামীর মরদেহ, বিছানায় রক্তাক্ত তৃতীয় স্ত্রীর লাশ
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় নিজ ঘরে সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ ও তাঁর তৃতীয় স্ত্রীর লাশ পাওয়া গেছে। আজ বুধবার দুপুরে উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের চরদামুকদিয়া এলাকায় নিজ ঘর থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, স্ত্রীকে হত্যার পর বৃদ্ধ স্বামী আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। লাশ দুটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শহিদুল ইসলাম ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, নিহত দম্পতি হলেন ফরিদুল ইসলাম (৭৪) ও তাঁর তৃতীয় স্ত্রী রাবিয়া খাতুন (৫৫)। ঘরের ভেতর ফরিদুলের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। আর রাবিয়া গলায় কাপড় প্যাঁচানো রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে ছিল। তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুরে। সেখানে তাঁর প্রথম স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা রয়েছেন। প্রায় ১৫ বছর আগে ভেড়ামারায় এসে ফরিদুল রাবিয়া খাতুনকে তৃতীয় বিয়ে করেন। রাবিয়া খাতুনের আগে একবার বিয়ে হয়েছিল, সেই ঘরে তাঁর দুই ছেলে রয়েছেন। তৃতীয় স্ত্রী রাবিয়াকে নিয়ে ফরিদুল কুষ্টিয়ার মিরপুরে সংসার শুরু করেছিলেন। ২০২৩ সাল থেকে তাঁরা ভেড়ামারার চরদামুকদিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এই বাড়ির পাশে আলাদা স্থানে রাবিয়ার প্রথম পক্ষের দুই ছেলে থাকেন। কোনো পারিবারিক কলহ তাঁদের মধ্যে ছিল না বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। কেন এমন ঘটল, তা কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গতকাল মঙ্গলবার রাতে খাবার খেয়ে ফরিদুল ও রাবিয়া ঘুমাতে যান। আজ সকাল ১০টার দিকে রাবিয়ার ছোট ছেলে শরিফুল তাঁদের ডাকতে থাকেন। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখতে পান, বাবা ফরিদুল ইসলাম ঘরের টিনের চালার বাঁশের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছেন। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) ফোন দিলে ভেড়ামারা থানা-পুলিশ এসে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ঘরের দরজা ভেঙে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করে।
ভেড়ামারা থানা-পুলিশ ফরিদুলের দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে আবদুল আলীম সবুজকে থানায় ডেকে নেয়। আবদুল আলীম সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে পুলিশকে বলেন, তাঁর বাবা ২০১২ সালে তাঁর মাকেও (দ্বিতীয় স্ত্রী) হত্যা করেছিলেন। পরে তিনি পালিয়ে ভেড়ামারায় চলে আসেন। আবদুল আলীম বাবার লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানান।
ভেড়ামারা থানার ওসি শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, টিনের ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা ছিল। বিছানায় লেপ দিয়ে মাথা ঢাকা অবস্থায় রাবিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর গলা ও মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পাশেই ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল ফরিদুলের লাশ। ঘটনাটি অনুসন্ধান করছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, রাবিয়াকে হত্যা করা হতে পারে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।