‘লেখাপড়ার খরচ দিতে পারিনি, এখন শুনছি মেয়ে পরীক্ষায় ভালো করেছে’

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ অর্জন পাওয়া সাদিয়া সুলতানা
ছবি: প্রথম আলো

আবুল বাশার গাজী পেশায় ভ্যানচালক। কোমরে ব্যথার কারণে দীর্ঘ সময় ভ্যান চালাতে পারেন না। এ কারণে ভ্যান ঠেলে মানুষের বাড়িতে সুপেয় পানি পৌঁছে দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। খুলনার কয়রা উপজেলার ২ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে তাই তিনি পানির ফেরিওয়ালা নামে পরিচিত।

আবুল বাশারের বড় মেয়ে সাদিয়া সুলতানা এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এ নিয়ে কিছুটা উচ্ছ্বসিত আবার কিছুটা চিন্তিত আবুল বাশার। তিনি বলেন, ‘অভাবের সংসারে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ঠিকমতো জোগাতে পারিনি। টাকার অভাবে ভালো পোশাক ও স্কুলে যাওয়া-আসার খরচও দিতে পারেনি কখনো। এখন শুনছি, মেয়ে পরীক্ষায় ভালো করেছে। সবাই আমার মেয়ের সুনাম করছে। কিন্তু আমি তো এখন চিন্তায় আছি। মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়। আগামীতে মেয়েকে কীভাবে পড়াব, এমন ক্ষমতা তো আমার নেই।’

সুন্দরবনের কোলঘেঁষা কয়রা গ্রামের মেয়ে সাদিয়া কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ–৫ পেয়েছেন। তাঁর স্কুলের নাম ছিল কয়রা সুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। এসএসসিতে এই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ–৫ পেয়েছিলেন তিনি। দারিদ্র্যের কারণে বর্তমানে সাদিয়া সুলতানার পড়ালেখার খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁর মা–বাবা।

দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাদিয়াই সবার বড়। সাদিয়া সুলতানা বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা অর্জন করে সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য একটা কিছু করতে চাই। আমার মা–বাবা স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। কিন্তু অভাবের কারণে সেটা সম্ভব হবে কি না, জানি না।’
বাড়ি বাড়ি পানি পৌঁছে দিয়ে দিনে ৪০০ টাকার মতো আয় করেন আবুল বাশার, যা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আবুল বাশার গাজী বলেন, ‘মেয়েটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করার বায়না ধরলে, এক মহাজনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে মেয়েরে দিছি।’

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অদ্রিশ আদিত্য মন্ডল বলেন, সাদিয়া সুলতানা অত্যন্ত মেধাবী। তাঁর আচার-আচরণও ভালো। কিন্তু খুবই গরিব। সমাজের সচেতন মানুষের একটু সহায়তা পেলে মেয়েটির মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটবে।

সাদিয়ার মা নাসিমা বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকেই অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে মেয়েকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। সহায়–সম্পদ বলতে কিছুই নেই। দুই শতক জমির ওপর বাড়ি করে আছেন। মেয়েটাকে নিয়ে তাঁদের অনেক আশা। কষ্ট করে হলেও মেয়েকে পড়াতে চান।