পুরোনো ক্ষতিগ্রস্ত রেলসেতু, গতি কমিয়ে চলে ৩৫ ট্রেন

আট কিলোমিটার গতিতে সেতু পার হয় ট্রেন। সেতুটির ১৪টি পিলারই দুর্বল। কয়েকটি পিলারের গা ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে লোহার অ্যাঙ্গেলের কাঠামো।

ইট সরে পিলারের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। গার্ডার ধরে রাখতে পিলারের দুই পাশে তৈরি করা হয়েছে লোহার অ্যাঙ্গেলের কাঠামো। এমন অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে ট্রেন। সম্প্রতি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার বাউনজান সেতুতে
ছবি: হাসান মাহমুদ

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার চলনবিলের বাউনজান রেলসেতুটি শত বছরের পুরোনো হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সেতুটির ক্ষতিগ্রস্ত পিলার সংস্কারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও কাজ প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ আছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এই সেতুতে গতি কমিয়ে প্রতিদিন উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ৩৫টি ট্রেন চলাচল করছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র পথ বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর রেললাইন। এই পথে প্রতিদিন প্রায় ৩৫টি ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনে প্রায় ৭৫ হাজার যাত্রী চলাচল করে। শত বছরের পুরোনো এই রেলপথে ব্রিটিশদের তৈরি বেশ কিছু রেলসেতু রয়েছে। এর মধ্যে বাউনজান সেতুটির পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি সেতুটি মেরামতের জন্য রেল বিভাগ ঠিকাদার নিয়োগ করে।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, চলনবিলে থই থই পানি। এর মধ্যে ১৪টি পিলারের ওপর লালরঙা সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে। সেতুটি ১০০ মিটার দীর্ঘ। অধিকাংশ পিলারের পলেস্তারা খসে পড়েছে। কিছু পিলারে রয়েছে ফাটল। দুটি পিলারের পাশে লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে গার্ডার আটকে রাখা হয়েছে। এ অবস্থাতেই সেতুটির ওপর দিয়ে চলছে ট্রেন। ট্রেন এলেই লাল পতাকা ওড়াচ্ছেন একজন কর্মী। এতে চালক গতি কমিয়ে ধীরে ধীরে পার হচ্ছেন সেতু।

■ এসব ট্রেনে প্রায় ৭৫ হাজার যাত্রী চলাচল করে।

■ অধিকাংশ পিলারের পলেস্তারা খসে পড়েছে। কিছু পিলারে রয়েছে ফাটল।

■ বিলে পানি বাড়ার কারণে কাজ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় রেল বিভাগ ঠিকাদার নিয়োগ করে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি পিলারের পাশে লোহার অ্যাঙ্গেলের কাঠামো তৈরির পর কাজ বন্ধ রেখেছে। প্রায় দুই মাস হলো তাঁরা আর কোনো কাজ করছে না।

কলেজশিক্ষক আবদুর রহিম জানান, তিনি নিয়মিত এই পথে ট্রেনে চলাচল করেন। সেতুর কাছে ট্রেন এলেই ভয় লাগে। অনেকেই ট্রেন থামলে নেমে যান, হেঁটে সেতু পার হন।

ভাঙ্গুড়া রেলস্টেশনের মাস্টার আবদুল মালেক জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচলে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ট্রেন যাওয়া-আসার সময় সেতুর কাছাকাছি পৌঁছালে লাল পতাকা দেখিয়ে তা থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপর রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আট কিলোমিটার গতিতে ট্রেন সেতু পার হচ্ছে।

সেতুটি সংস্কারের কাজ করছে ম্যাক্স আরটিসি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির কর্মী সাজু সেখ বলেন, পুরোনো এই সেতুর ১৪টি পিলারই দুর্বল। এর ফলে প্রতিটি পিলারের গা ঘেঁষে লোহার বেষ্টনী দেওয়া হচ্ছে। এই বেষ্টনীই মূল পিলারকে রক্ষা করবে। কাজ শুরুর পর দুটি পিলারে বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। তবে বিলে পানি বাড়ার কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। পানি একটু কমলে আবার কাজ শুরু করা হবে।

পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের এটিই একমাত্র পথ। এর ফলে বাধ্য হয়ে ধীরগতিতে ট্রেন চালিয়ে সেতুটি পার করতে হচ্ছে। এতে সময় বেশি লাগায় মাঝেমধ্যে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ও হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী বীরবল মণ্ডল বলেন, সেতুটি পুরোনো হলেও ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি নেই। ক্ষতিগ্রস্ত পিলারগুলোর সংস্কারকাজ চলছে। সংস্কারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত গতি কমিয়ে ট্রেন চললে কোনো ভয় নেই।