গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা 

ভাঙন রোধ না করে রিংবাঁধ দিলে সব ঘরবাড়ি নদীর ভেতরে চলে যাবে। পরিবারগুলো গৃহহীন হয়ে পড়বে।

সীমান্ত নদী ইছামতীর দেবহাটা উপজেলার ভাতশালা এলাকায় পাউবোর বেড়িবাঁধে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরার দেবহাটায় ইছামতী নদীর বেড়িবাঁধে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভাতশালা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-১-এর আওতাধীন বেড়িবাঁধে দুই মাস আগে এ ভাঙন শুরু হয়। তবে হঠাৎ করে গত সোমবার থেকে ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করেছে। যেকোনো মুহূর্তে এ বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরার দেবহাটা ও কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমানা নির্ধারণ করেছে। এ নদীর ভাতশালা এলাকার বেড়িবাঁধে গত জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভাঙন দেখা দেয়। সোমবার থেকে ভাঙন বাড়তে বাড়তে ১৪০-১৫০ মিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হয়েছে।

ভাতশালা এলাকার বাসিন্দা আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, তাঁদের এলাকায় নদীর বেড়িবাঁধের ভেতর ১৫০-২০০ পরিবারের বসবাস। বাঁধের ভাঙন রোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিবারগুলোর বাড়িঘর, ফসলি জমি ও মাছের ঘের প্লাবিত হতে পারে। এখনই বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে এসব পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়বে। আঞ্জুয়ারা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধের ভাঙন রোধে সময়মতো উদ্যোগ নিলে বছর বছর তাঁদের সম্পদ হারাতে হতো না।

দেবহাটা উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মতিন বলেন, পাউবো কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে বাঁধ ভেঙে বাংলাদেশের ভূখণ্ড নদীতে চলে যাচ্ছে আর ভারতের পাশে জেগে উঠছে চর। ভাতশালা এলাকায় ইছামতীর ভয়াবহ ভাঙনে পাউবোর বেড়িবাঁধের একাংশ নদীতে চলে গেছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে কংক্রিটের ব্লক ও বালুভর্তি বস্তা ডাম্পিং করার জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বলছে, ভাঙন রোধে রিংবাঁধ দিতে হবে। আবদুল মতিন বলেন, ওই এলাকায় রিংবাঁধ দেওয়ার বাস্তবতা নেই। রিংবাঁধ দিলে তা দেওয়া হবে এখনকার ভাঙনের স্থান থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়ে লোকালয়ের আরও ভেতরের দিকে। তা করা হলে এখনকার ভাঙনের পার্শ্ববর্তী এলাকার ১৫০-২০০ পরিবারের বাড়িঘর রিংবাঁধের বাইরে থাকবে। ফলে এখনকার ভাঙন থেকে রিংবাঁধ তাঁদের রক্ষা করতে পারবে না। পরিবারগুলোর পাকা ও আধা পাকা ভবন রয়েছে। ভাঙন রোধ না করে রিংবাঁধ দিলে সব ঘরবাড়ি নদীর ভেতরে চলে যাবে। পরিবারগুলো গৃহহীন হয়ে পড়বে।

দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান বলেন, সোমবার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে পাউবো কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনকবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও কংক্রিটের তৈরি ব্লক ডাম্পিংয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বলা হয়েছে।

পাউবোর ওই এলাকায় দায়িত্বরত সেকশন অফিসার (এসও) সাইদুর রহমান বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা তিনি ও পাউবো বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ তালুকদার পরিদর্শন করেছেন। কয়েক বছর ধরে ওই এলাকার বাঁধের ভাঙন রোধে ব্লক ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়, কিন্তু স্থায়ী হচ্ছে না। বর্তমানে ভাঙনের মাত্রা ভয়াবহ হওয়ায় কেবল ব্লক ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে রোধ করা যাবে না। ভাঙনকবলিত ওই এলাকায় নতুন করে রিংবাঁধ দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, রিংবাঁধ দিলে অনেকে গৃহহীন হয়ে পড়বেন। বিষয়টি খুলনা ও ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ব্লক ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে।