পাবনার সাঁথিয়া
কাশীনাথপুরে এসেই আত্রাই নদ নিশ্চিহ্ন
নদের এপাড়-ওপাড় গড়ে তোলা হয়েছে পাকা রাস্তা। সেই রাস্তার দুই পাশে গড়ে উঠেছে দোকানপাট।
একসময়ের খরস্রোতা আত্রাই নদ পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশীনাথপুর হাটের কাছে এসেই পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। নদের এই অংশ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অবৈধ স্থাপনা। এসব স্থাপনায় যাতায়াতের জন্য নদের এপাড়-ওপাড় গড়ে তোলা হয়েছে চওড়া পাকা রাস্তা। সেই রাস্তারও দুই পাশে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। এতে নদের প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে এর অস্তিত্বই হারিয়ে গেছে।
আত্রাই নদের উৎপত্তি সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নে ইছামতী নদী থেকে। এরপর এটি সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেড়া উপজেলার মাসুন্দিয়া ইউনিয়নে বাদাই নদের সঙ্গে মিলিত হয়ে পদ্মা নদীতে গিয়ে মিশেছে। কাশীনাথপুর হাটের কাছে নদটি পুরোপুরি ভরাট করায় এর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ আর নেই। তবে নদের উৎসস্থল থেকে মোহনা পর্যন্ত বাকি অংশ স্রোতহীন ও বদ্ধ জলাশয় অবস্থায় কোনোরকমে টিকে আছে। অথচ এলাকাবাসীর ভাষ্য, একসময় এই নদে বড় বড় নৌকা চলাচল করত। পাওয়া যেত ইলিশসহ নানা রকম সুস্বাদু মাছ।
সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলার সংযোগস্থলে কাশীনাথপুরের অবস্থান। পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় স্থানটি জেলার অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। নদ দখলের স্থানসহ ব্যবসাকেন্দ্রের বেশির ভাগ অংশ পড়েছে সাঁথিয়া উপজেলায়। কাশীনাথপুর হাটের পার্শ্ববর্তী এলাকার জায়গার দামও বেড়ে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদের জায়গা ইচ্ছেমতো দখল করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাশীনাথপুর ট্রাফিক মোড় থেকে হাটের শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার বেদখল হয়ে আছে। নদের দুই পাড়, আবার কোথাও কোথাও পুরো অংশজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবনসহ শতাধিক পাকা ও আধা পাকা স্থাপনা। এসব স্থাপনায় রয়েছে দোকান, ক্লিনিকসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। শতাধিক স্থাপনা হলেও দখলকারী ২৫-৩০ জন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষেরা।
দখল হওয়া জায়গার মধ্যে কাশীনাথপুর হাটসংলগ্ন অংশে নদের কোনো অস্তিত্ব নেই। এই অংশে নদের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে একটি ছোট সেতু। এর দুদিকে নদের এপাড়-ওপাড় পর্যন্ত পাকা সড়ক। দেখে বোঝার উপায় নেই, একসময় এখানে একটি খরস্রোতা নদ ছিল। নদের ঠিক কী পরিমাণ জায়গা দখল হয়েছে, এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য নেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দখলের মহোৎসব শুরু হয় ২০০৩ সালের দিকে। ওই সময় সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রয়াত জালালউদ্দিন মিয়ার উদ্যোগে সরকারি অর্থে আত্রাই নদের ওপর সেতু ও পাকা রাস্তা নির্মিত হয়। তিনি রাস্তার দুই পাশে সাত-আটটি দোকান গড়ে তোলেন। এর পর থেকেই দখলের হিড়িক পড়ে যায়।
এ ব্যাপারে প্রয়াত জালালউদ্দিনের ছেলে ও সেখানকার ব্যবসায়ী আলামিন মিয়া জানান, নদের পাড়ে থাকা তাঁদের নিজস্ব জমিতেই তাঁরা দোকানপাট গড়েছেন। তবে কাশীনাথপুর মৌজা অংশে সামান্য কিছু সরকারি জায়গা তাঁদের দখলে থাকতে পারে। সরকারি নির্দেশ পাওয়ামাত্রই তাঁরা জমি ছেড়ে দেবেন। আর প্রায় ২০ বছর আগে তাঁর বাবা ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে নদে সেতু ও রাস্তা হয়েছিল। তখন তিনি ছোট ছিলেন। তাঁর জানামতে, সরকারিভাবে ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এই রাস্তা ও সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয় পাঠাগার ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের কর্মী কলেজশিক্ষক আলাউল হোসেন বলেন, ‘দখলের কারণে স্রোতস্বিনী আত্রাই নদ কাশীনাথপুরে এসে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমরা আত্রাইকে রক্ষায় বিভিন্ন সময়ে দাবি জানিয়ে এসেছি। এখন সরকারি উদ্যোগ আশা করি।’
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ হোসেন বলেন, ‘আত্রাই নদ রক্ষার ব্যাপারে আমাদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যুক্ত করে এ ব্যাপারে ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সিএস, এসএ, আরএস রেকর্ড পর্যালোচনার পাশাপাশি অতীত ও বর্তমান অবস্থা যাচাই করে প্রতিবেদন দাখিল করলে তা নদী রক্ষা কমিশনে পাঠানো হবে। নদ দখলের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।’