চাঁদা না পেয়ে গুলি চালাল কেএনএফ সদস্যরা, এক পাড়াবাসী গুলিবিদ্ধ

বান্দরবানে রুমায় কেএনএফ এর গুলিতে গুলিবিদ্ধ উহ্লাচিং মারমা বান্দরবান সদর হাসপাতালে। ছবি - আজ মঙ্গলবার দূপুর ১২ টায় বান্দরবান সদর হাসপাতাল থেকে তোলাছবি: মংহাইসিং মারমা

বান্দরবানের রুমার রিঝুকপাড়ায় আজ মঙ্গলবার ভোরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক পাড়াবাসী আহত হয়েছেন। পাড়াবাসীর দাবি, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা উহ্ণাচিং মারমা (৩৪) নামের ওই পাড়াবাসীকে গুলি করেছে। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান। চাঁদা না দেওয়ায় কেএনএফ সদস্যরা তাঁকে গুলি করেছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

রিঝুকপাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রুমা সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রিঝুকপাড়ায় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কেএনএফের ১৭ জন সদস্য ঢুকে পড়ে। পাড়ায় এসে তারা পাড়াবাসীর কাছ থেকে টাকা দাবি করে। পাড়ার একজনের কাছ থেকে টাকা লুট করে। পাড়াবাসী চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে কয়েকজনকে মারধর এবং বন্দুকের গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় উহ্ণাচিং মারমা ঘর থেকে বের হলে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি লুটিয়ে পড়েন। কেএনএফ সদস্যরা চলে যাওয়ার পর পাড়াবাসী তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান।

রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) আবদুল্লাহ আল হাসান জানান, উহ্ণাচিং মারমার কোমরের বাঁ পাশে গুলি লেগেছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাঁর শরীরের তাপমাত্রা কমে গেছে। তাঁকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শৈবং মারমা বলেন, পাড়াবাসীর ভাষ্যমতে, কেএনএফ রিঝুকপাড়ায় চাঁদাবাজি করতে এসেছিল। দরিদ্র পাড়াবাসী চাঁদা দিতে না পারায় তাঁদের মারধর ও নির্যাতন করেছে। কেএনএফ বিভিন্ন পাড়া-গ্রামে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে এবং চাঁদা না পেলে লোকজনকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শাহাজাহান জানান, ভোরে রিঝুকপাড়ায় একদল চাঁদবাজ ঢুকে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় উহ্ণাচিং মারমাকে গুলি করে। সন্ত্রাসীরা কেএনএফের সদস্য—দাবি পাড়াবাসীর। তবে তদন্ত করে সন্ত্রাসীদের প্রকৃত পরিচয় জানা যাবে।

বান্দরবানের নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ ২০২২ সাল থেকে রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকায় তৎপরতা শুরু করে। তারা দাবি করে, বম, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, খেয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে। তাদের বিরুদ্ধে পাহাড়ের গোপন আস্তানায় সমতলের জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ৩৮ জঙ্গি ও বহু কেএনএফ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। কেএনএফের হামলায় গত বছর পাঁচজন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। কেএনএফ এখন রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় এবং চাঁদাবাজি করে বলে অভিযোগ করা হয়।