পটিয়ায় সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্রধারীদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি

সংঘর্ষের সময় অস্ত্রারীদের অবস্থান। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের পটিয়ার বাদামতল এলাকার সিএনজি স্টেশনেছবি ভিডিও থেকে সংগৃহীত

চট্টগ্রামের পটিয়ার বাদামতল এলাকার সিএনজি স্টেশনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মনসা বাদামতল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় কয়েকজনকে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেলেও আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।  

উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফৌজুল কবিরের অনুসারী সিএনজিচালক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ফোরকান ও জঙ্গলখাইন ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেনের অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন সংঘর্ষে নেতৃত্ব দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের দিকে ওই এলাকায় আওয়ামী লীগে নেতা মহিউদ্দিনের ভাই এরফানের সঙ্গে ফোরকানের ঝগড়া হয়। ওই ঝগড়া নিয়ে দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষের সময় কয়েকজনকে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা যায়। এ সময় প্রচুর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এলাকার লোকজন বেশ কয়েকটি গুলির শব্দও শোনেন। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে একপর্যায়ে কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে মহিউদ্দিনের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।  

পটিয়া বাদামতল-কালুরঘাট লাইনের সিএনজিচালিত অটোরিকশা সমিতির সভাপতি ফোরকান বলেন, ‘সিএনজির চালক বা মালিক কিছু না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে সমিতি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন মহিউদ্দিন। সমিতির নামে প্রতি সিএনজি থেকে চাঁদা তুলতেন তিনি। সম্প্রতি সমিতির সদস্যরা আমাকে সভাপতি করে নতুন কমিটি গঠন করলে মহিউদ্দিন আমার বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এর জের ধরে মহিউদ্দিন ও তাঁর ভাই এরফান গতকাল দুপুরের দিকে বাদামতল এলাকায় আমাকে মারধর করে আহত করেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিই।’

সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর করা হয় একটি বাড়ি। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের পটিয়ার বাদামতল এলাকার সিএনজি স্টেশনে
ছবি প্রথম আলো

এ বিষয়ে মহিউদ্দিন জানান, ‘বাদামতল মোড়ে আমার একটি দোকান রয়েছে। দোকানের অপর প্রান্তে সিএনজি সমিতির সদস্যরা একটি মসজিদ পরিচালনা করেন। তাঁরা দৈনিক হারে চাঁদা তুলে একটি অংশ সমিতির সদস্যদের কল্যাণে ও বাকি টাকা দিয়ে মসজিদের ইমামের বেতন ও খরচ বহন করতেন। তবে মসজিদের খরচের টাকা আমার কাছে রক্ষিত থাকত। সম্প্রতি কয়েকজন বাদামতল মোড় থেকে পটিয়া লাইনে অন্য সমিতির নামে চাঁদা তুলতে চাইলে আমি অটোরিকশাচালকদের চাঁদা দিতে নিষেধ করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মো. ফোরকান আমার ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করেন। পরে গতকাল ৫০-৬০ জন লোক নিয়ে এসে আমার ঘরে ও পাশের কয়েকটি ঘরে হামলা চালানো হয়।’

হাবিলাসদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান ফৌজুল কবির বলেন, সিএনজি সমিতির নামে চাঁদা তোলা হলে সেটা সমিতির কল্যাণে ব্যয় হবে। বাইরের লোক কেন সমিতির নামে চাঁদা তুলবে, তা নিয়ে প্রতিবাদ করেন সমিতির সভাপতি ফোরকান। এ নিয়ে বিরোধের জেরে মহিউদ্দিন ও তাঁর ভাই এরফানসহ কিছু অস্ত্রধারীরা ফোরকানকে মারধর করে।

জঙ্গলখাইন ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন বলেন, মহিউদ্দিনের দোকানের সামনে সিএনজি রাখা নিয়ে তাঁর ভাই এরফানের সঙ্গে সিএনজি সমিতির সভাপতি ফোরকানের ঝগড়া হয়েছে। এ সময় তিনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে একটি সভায় ছিলেন। খবর পেয়ে এখানে এসেছেন। মহিউদ্দিন তাঁর গ্রামের মানুষ, অনুসারী নন।

এ বিষয়ে পটিয়া থানার উপপরিদর্শক মো. আকরাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ সময় দুই চেয়ারম্যানকে দুই পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায়। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দীন বলেন, সিএনজি স্টেশন নিয়ে ঝামেলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত কারও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।