ঘর আলো করলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সোহেল

সোহেল রানা
ছবি: সংগৃহীত

সোহেল রানা জন্মগতভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে তিনি প্রতিবন্ধী। তাঁকে নিয়ে বাবা-মায়ের দুঃখের অন্ত ছিল না এত দিন। কিন্তু সেই ছেলেই ঘর আলো করেছেন পরীক্ষায় ভালো ফল করে। এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।

নগরের আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এবার এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সোহেল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক করে সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখেন তিনি।

সীতাকুণ্ডের ছোট দারোগাহাট এলাকার সালামত উল্লাহ ও নূর বানুর ছেলে সোহেল রানা। সালামত ১০ বছর হলো মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন। সেখানে গিয়ে তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। তাই দেশে যে খুব টাকা পাঠাতে পারেন, তেমন নয়। বড় ছেলে আরিফুল পড়াশোনা করেননি। তাই সম্প্রতি বড় ছেলেকে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন সালামত। তবে সোহেলের পড়াশোনায় আগ্রহ বেশ। পরিবার বাড়িতে থাকলেও চট্টগ্রাম নগরের হামজারবাগ এলাকায় একটি মেসে থেকে কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি। আর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুল থেকে।

সোহেলের ছোট বোন ফারজানা আকতার স্নাতকের ছাত্রী। ফারজানা সিটি কলেজে পড়েন। সোহেল বলেন, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে আমি পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ি। ছোট বোনই একমাত্র পড়ালেখা করে চলেছে। তবে আমিই আমাদের ঘরে প্রথম জিপিএ-৫ পেয়েছি। এতে আমি বেশি আনন্দিত। মা-বাবাও খুব খুশি।’

দুপুরে পরীক্ষায় ভালো ফলের খবরটি যখন সোহেল রানা পান, তখন তিনি বাড়িতে। মা নূর বানু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলের পড়ালেখার প্রতি অনেক ঝোঁক। সে ভালোভাবে পাস করেছে, এতে আমরা অনেক খুশি। সে আরও উন্নতি করুক, আল্লাহর কাছে এটাই কামনা।’

চলার পথটা এত সহজ ছিল না। ব্রেইলপদ্ধতিতে পড়েছেন সোহেল রানা। নানা সংকট প্রতি পদে পদে ছিল। শ্রুতলেখক থেকে শুরু করে পড়ালেখার সামগ্রী—সবকিছুর অভাব ছিল। তারপরও তাঁর এই অদম্য সাফল্যে পুরো পরিবার উচ্ছ্বসিত।

সোহেল রানা বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছি। আজ সাফল্য পেয়ে ভালো লাগছে। ভবিষ্যতে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে সরকারি চাকরি করতে চাই।’

আশেকান ডিগ্রি কলেজ থেকে সোহেল ছাড়াও আরও তিনজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁরা সবাই উত্তীর্ণ হয়েছেন।

এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিরীন আকতার চৌধুরী বলেন, সোহেল শ্রুতলেখক দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। তাঁদের প্রতি যত্নও ছিল শিক্ষকদের। নিজেরও চেষ্টা ছিল।

নগরের হাজেরা তুজ ডিগ্রি কলেজ থেকেও তিনজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এবার পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হয়েছেন। চট্টগ্রামের মুরাদপুর সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ বলেন, যে সাতজন এইচএসসি পাস করেছেন, তাঁরা সবাই মুরাদপুর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। অনেক কষ্ট ও প্রতিবন্ধকতা জয় করে তাঁরা আজ এই সাফল্য পেয়েছেন।