‘ভয় যত কম, মানবাধিকার তত বেশি’

আলোচনা সভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে নগরের অলকার মোড়ে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনকক্ষেছবি: প্রথম আলো

যে সমাজে প্রশ্ন করতে ভয় হয়, রাতে নির্ভয়ে পথ চলতে ভয় হয়, নিজের মত প্রকাশ করতে ভয় হয়, বুঝতে হবে, সেখানে মানবাধিকারের ঘাটতি রয়েছে। ভয় যত কম, মানবাধিকার তত বেশি—মানবাধিকারের এমন সহজ অথচ গভীর ব্যাখ্যা তুলে ধরে ভয়হীন সমাজ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন।

আজ শুক্রবার রাজশাহী নগরের অলকার মোড়ে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনকক্ষে জাতিসংঘ দিবস উপলক্ষে ‘মানবিক সংকট উত্তরণে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। প্রথম আলোর রাজশাহী জেলা বন্ধুসভা আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ, রাজশাহী আলোর পাঠশালাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

জাহিদ হোসেন তাঁর বক্তব্যে ফিওদর দস্তয়েভস্কির বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য ইডিয়ট’-এর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বৈচিত্র্যই পৃথিবীকে সুন্দর রেখেছে এবং এই সৌন্দর্যকে গ্রহণ করার মাধ্যমেই মানবতা মুক্তি পাবে। পৃথিবীর সব সংঘাত ও হানাহানির মূল সমাধান হলো ‘বিউটি অব ডাইভারসিটি’ বা বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যকে মেনে নেওয়া। অন্যের বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রাকে সম্মান জানানোর মাধ্যমেই একটি শান্তিময় পৃথিবী গড়া সম্ভব। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায়ই নিজের জানা সীমিত জ্ঞান দিয়ে অন্যকে বিচার করি, যা সমাজে অসহিষ্ণুতা তৈরি করে। অন্ধের হস্তী দর্শনের মতো আমরা খণ্ডিত সত্যকে আঁকড়ে ধরে থাকি।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি ক্লাসরুমের চেয়ে লাইব্রেরিতে বেশি শিখেছি। বই পড়ার মাধ্যমে পৃথিবীকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ তৈরি হয়।

ফেসবুকের ফেক নিউজ থেকে শুরু করে সমাজের নানা কুসংস্কার—এসব আবর্জনা মস্তিষ্ক থেকে ডিলিট করতে না পারলে সত্যের জন্য জায়গা তৈরি হয় না। জীবন খুব ছোট। এই ছোট জীবনে পরাজয়, অপমান, আনন্দ আর বেদনাকে সঙ্গী করেই এগিয়ে যেতে হয়। নিজের ভেতরের অমিত সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করুন এবং ভয়হীন জীবনযাপন করুন।’

তরুণদের উদ্দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তা পাঁচটি পরামর্শ দেন—নিজের শরীরকে ভালোবাসা ও এর যত্ন, প্রশ্ন করার মানসিকতা তৈরি, নিজের পায়ে দাঁড়ানো, পৃথিবী ভ্রমণ ও নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন এবং সম্পর্ককে বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিচালনা করা।

আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলো রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ।