পদ্মার ঢেউ উপেক্ষা করে চলে সাইফুলের কলা ব্যবসা
ঢাকার দোহার উপজেলার নারায়ণপুর এলাকার সাইফুল ইসলাম একসময় ট্রাকচালকের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। পরে কিছুদিন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়েছেন। কিন্তু কোনোভাবেই সংসারের অভাব দূর করতে পারেননি। পরে বেছে নেন কলার ব্যবসা।
তিন বছর ধরে পদ্মা নদীর মাঝে শালেপুরচর থেকে সবরি কলার ছড়া এনে মৈনটঘাটে পাইকারি বিক্রি করেন সাইফুল। ধীরে ধীরে বাড়ান ব্যবসার পরিধি। এখন প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ১০০ ছড়া কলা বিক্রি করেন।
এ ব্যবসা করে তিন বছরেই দোহার উপজেলার নারায়ণপুর এলাকার সাইফুল এখন স্বাবলম্বী। তাঁর সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। এসব কলা সরাসরি পদ্মার চরাঞ্চল শালেপুরচর থেকে কৃষকের কাছ থেকে কিনে আনেন তিনি। পরে নৌকায় করে নিয়ে যান মৈনটঘাটে। নৌকা থেকে কলা নিয়ে যান দোকানিরা। সাইফুলের চোখেমুখে হাসির ঝলকানি। দিনকাল কেমন চলছে, এ প্রশ্ন করতেই সাইফুল বলে ওঠেন, ‘মামা আগের থেকে আল্লাহ সুখে রাখছেন।’
সাইফুলের কলায় কোনো ভেজাল নেই। পাকলে বেশ সুঘ্রাণ হয়। মৈনটঘাটে ঘুরতে আসা মানুষ এ কলা পছন্দ করে।
মৈনটঘাট থেকে পশ্চিমে পদ্মা নদীর মধ্যে শালেপুর এখন সবজি ও ফসলের মাঠ। আছে নানা ফলের চাষও। কলার পাশাপাশি এখানে জাম্বুরা, পেয়ারা, লেবু ও আমের চাষ হয় বলে জানান স্থানীয় আলমগীর হোসেন। এসব উৎপাদনের বেশির ভাগই বিক্রি হয় দোহারের বিভিন্ন হাটবাজারে। কখনো কখনো যায় ফরিদপুরের চরভদ্রাসন ও সদরপুরে। তিনি প্রতিদিন সকালে গিয়ে কিনে রাখা কলাবাগান দেখভাল করেন।
সরেজমিনে গত মঙ্গলবার বিকেলে মৈনটঘাটে দেখা যায়, সাইফুল ইসলামের কলাবোঝাই নৌকা ঘাটে ভিড়ছে। এ কথা শুনেই দোকানিরা ঘাটে গিয়ে কলার দরদাম শুরু করেছেন। নৌকাভর্তি কলার ছড়া দেখতে বেশ লোভনীয়। কে কার আগে ভালো কলার ছড়া কিনবেন, সে প্রতিযোগিতাও কম নয়। এসব কলা পাকাতে কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না বলে দাবি করেন সাইফুল। কলার ছড়া আকার ভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
সাইফুল বলেন, সব খরচ মিটিয়ে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়। এতে তাঁর সংসার চলে যায়। এভাবে স্ত্রী–সন্তান ও বাবা–মাকে নিয়ে তিন বছর ধরে বেশ ভালোভাবে চলছে তাঁর সংসার। তিনি মৈনটঘাটে সপ্তাহে দুই দিন কলা নিয়ে আসেন। বাকি সময়ে কেনা কলা পরিচর্যা করেন। একমাত্র উপার্জনের পথ হিসেবে সবরি কলা ব্যবসাকেই বেছে নিয়েছেন সাইফুল। পদ্মার উত্তাল ঢেউ থামাতে পারে না তাঁকে। গ্রীষ্ম–বর্ষা–শীত সব মৌসুমেই তাঁর এ ব্যবসা চলে।
সবরি কলার বাগান থেকে শুধু পাকার উপযোগী ছড়া কিনে বিক্রি করেন বলে জানালেন সাইফুল। তবে এ ব্যবসার জন্য তাঁকে এখন আর গ্রামে বা মহল্লায় ঘুরতে হয় না। তাঁর জন্য অপেক্ষায় থাকেন পদ্মা নদী পাড়ের মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনটঘাট এলাকার দোকানিরা। প্রত্যেকে দুই থেকে তিনটি কলার ছড়া কিনে নেন।
সব খরচ মিটিয়ে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়। এতে সংসার চলে যায়। গ্রীষ্ম–বর্ষা–শীত সব মৌসুমেই এ ব্যবসা চলে।
সাইফুলের কাছ থেকে নিয়মিত কলা কেনেন মৈনটঘাটের দোকানি আলম হোসেন। তিনি বলেন, তাঁর কলায় কোনো ভেজাল নেই। পাকলে বেশ সুঘ্রাণ হয়। মৈনটঘাটে ঘুরতে আসা মানুষ এ কলা পছন্দ করে। দেলোয়ার হোসেন নামে আরেক দোকানি বলেন, কাঁচা সবরি কলার ছড়া দু–এক দিন রাখলেই সোনালি রং হয়ে পুরোপুরি পেকে যায়। তখন এক হালি কলা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
সাইফুলের ব্যবসায় ঝুঁকিও আছে। বিশেষ করে বৈরী আবহাওয়া বা বর্ষার মৌসুমে পদ্মা উত্তাল হয়ে উঠলে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নদী পাড়ি দিয়ে ঘাটে আসা তাঁর জন্য কষ্টকর হয় পড়ে। এ ছাড়া পদ্মার মাঝে নৌ–দস্যুদেরও ভয় থাকে। সাইফুল বলেন, ‘এখন কলাই আমার জীবনের ভেলা। প্রতিদিন দুজন শ্রমিক নিয়ে এ কাজ করি। ভোর হলে চরে যাই। পরে বিকেলে ট্রলারভর্তি কলা নিয়ে ফিরি।’