রাজশাহীতে এক দিনে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ৯ মামলার রায়, সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছর

প্রশ্নপত্র ফাঁস
প্রতীকী ছবি

রাজশাহী বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত এক দিনে প্রশ্নপত্র ফাঁসের পৃথক নয়টি মামলার রায় দিয়েছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সাত বছরসহ আটটি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে নয়জনকে সাজা ও অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অন্য একটি মামলার আসামিরা খালাস পেয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে আদালতের বিচারক জিয়াউর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ ও এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়। এর মধ্যে তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে নওগাঁ, বগুড়া ও রাজশাহীতে তিনটি এবং বাকি মামলাগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজশাহী মহানগর, নাটোর, বগুড়া ও পাবনায় দায়ের করা হয়েছিল। আদালত সব কটি মামলার রায় এক দিনে ঘোষণা করেন।

প্রশ্নপত্র ফাঁস সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মনে হতাশার সৃষ্টি করে এবং তাদের পরিশ্রমকে ব্যর্থ করে দেয়। প্রচলিত সিস্টেমের প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ইসমত আরা বলেন, সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ নয়টি মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়ে রাজশাহীর চারঘাটের রনি ইসলাম ও বগুড়ার মাহবুব আলমকে সাত বছর করে, বগুড়ার রোমান মিয়া ও রাজশাহী নগরের নাবিল উৎসকে দুই বছর করে, নাটোরের রিপন আলী ও শিহাবকে এক বছর করে এবং শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়ে নওগাঁর তারজুলকে সাত বছর, পাবনার রাকিবুল ইসলাম ও মেহেদী হাসানকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া দণ্ড পাওয়া ব্যক্তিদের বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলায় খালাস পেয়েছেন নওগাঁর আবু ফরহাদ।

আরও পড়ুন

রায় ঘোষণার সময় সাত আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক ছিলেন একজন। পিপি ইসমত আরা বলেন, আইসিটি আইনে সর্বনিম্ন সাজা সাত বছর হওয়ায় ওই আইনের মামলার আসামিদের সাত বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সর্বনিম্ন সাজা কম থাকায় মামলার আসামিদের কম সাজা হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যত বেশি ডিজিটাল সম্প্রসারণ হচ্ছে, তত বেশি ডিজিটাল অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। মানুষের হাতের মুঠোয় ইন্টারনেট–সুবিধা পৌঁছে যাওয়ায় এর অপব্যবহার করে একশ্রেণির প্রতারক চক্র প্রশ্নপত্র ফাঁসের নামে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ধরনের কার্যক্রমের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার পরিবর্তে প্রশ্নপত্র পাওয়ার লোভ জাগ্রত হচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেধা ও মননের জন্য হুমকিস্বরূপ।

আরও পড়ুন

আদালত আরও বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মনে হতাশার সৃষ্টি করে, তাদের পরিশ্রমকে ব্যর্থ করে দেয় এবং তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে। প্রচলিত সিস্টেমের প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেয়। এ ধরনের প্রতারকদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।

সাইবার অপরাধের বিচারে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে দেশের আটটি বিভাগে একটি করে সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার। ওই মাস থেকেই রাজশাহীতে সাইবার ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর এবারই প্রথম এক দিনে এত বেশি মামলার রায় দেওয়ার ঘটনা ঘটল।