কাজী জাফর উল্যাহর আয় বেড়েছে পৌনে ৩ গুণ, কমেছে দেনা

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ
ফাইল ছবি

পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহর বার্ষিক আয় বেড়েছে পৌনে তিন গুণ। একই সময়ে তাঁর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ের তুলনায় এবার তাঁর দায়দেনা কমেছে। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে সঞ্চয়পত্র, এফডিআরসহ বিভিন্ন খাতে তাঁর স্ত্রীর সাড়ে তিন গুণের বেশি অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে।

কাজী জাফর উল্যাহ আওয়ামী লীগের সংসদীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এবং ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-চরভদ্রাসন-সদরপুর) আসনে দল মনোনীত প্রার্থী। দ্বাদশ ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করা তাঁর হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

আয় বেড়েছে পৌনে ৩ গুণ

২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় কাজী জাফর উল্যাহ হলফনামায় পেশা হিসেবে ‘শিল্পপতি’ উল্লেখ করলেও এবার তিনি পেশার জায়গায় ‘রাজনীতি’ লিখেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট–ভাড়া থেকে ৮৩ লাখ ৮৭ হাজার ৭৩৫ টাকা, শেয়ার–সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ থেকে ১ কোটি ৪ লাখ ৯৯ হাজার এবং চাকরি থেকে ১২ লাখ টাকা বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন। অর্থাৎ ২০১৮ সালে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ২ কোটি ৮৭ হাজার ৪২৬ টাকা।

২০২৩ সালে বাড়িভাড়া থেকে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৯৪ হাজার ৭৯৪ টাকা, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র থেকে ৩ কোটি ৮৮ লাখ ২৫ হাজার ৩১৪ ও চাকরি থেকে ১২ লাখ টাকা বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে এবার তাঁর বার্ষিক আয় ৫ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার ১০৮ টাকা। অর্থাৎ ৫ বছরের ব্যবধানে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়ে ২ দশমিক ৭৪ গুণ হয়েছে।

অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে

হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় কাজী জাফর উল্যাহর হাতে নগদ ৯৩ হাজার ৯২১ টাকা ছিল। এবার তাঁর কাছে নগদ টাকা আছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৮ টাকা। এ ছাড়া বন্ড, ঋণপত্র, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এবং স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ বাবদ ২০১৮ সালে তাঁর ২৩ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার ৭৯৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ ছিল। ৫ বছরের ব্যবধানে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ বাবদ তিনি ৬১ কোটি ৮ লাখ ৫৪ হাজার ১৯৩ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। অর্থাৎ তাঁর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। এই সময় তাঁর ব্যাংকে এফডিআরের পরিমাণ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ২০১৮ সালে এফডিআর ছিল ৭ কোটি ৯০১ লাখ টাকা। এবার তিনি এফডিআর বাবদ ৫৩ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার ২৫১ টাকা দেখিয়েছেন।

স্ত্রীর সম্পদও বেড়েছে

পাঁচ বছর আগে নগদ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা, এফডিআর, স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ বাবদ কাজী জাফর উল্যাহর স্ত্রীর নামে ৮ কোটি ১২ লাখ ৮৫ হাজার ৬২ টাকা ছিল। ২০২৩ সালে দাখিল করা হলফনামায় তাঁর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২৯ কোটি ৪১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫৫ টাকা। অর্থাৎ ৫ বছরে ৩ দশমিক ৬১ গুণ অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে তাঁর স্ত্রীর। তবে তাঁদের স্থাবর সম্পদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ের মতো একই পরিমাণ আছে। কাজী জাফর উল্যাহর নামে ফরিদপুরে সাড়ে ১৬ টাকার অকৃষিজমি, ধানমন্ডি ও মিরপুরে দালান, ২টি অ্যাপার্টমেন্ট এবং স্ত্রীর নামে মিরপুর ও পূর্বাচলে অকৃষিজমি ও বনানীতে কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি আছে।

স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী কাজী জাফর উল্যাহ প্রায় ১১ লাখ টাকা দামের একটি গাড়িতে চড়েন। তবে তাঁর স্ত্রী ৫৮ লাখ টাকার গাড়িতে চড়েন। এ ছাড়া অলংকার, আসবাব, ইলেকট্রনিকস, পিস্তল বাবদ ১৪ লাখ ৪৪ হাজার ২৯২ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। তাঁর স্ত্রীর নামে অলংকার, আসবাব ও পিস্তল বাবদ ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৪ টাকার সম্পদ আছে। ২০১৮ সালে কাজী জাফর উল্যাহর দেনা ছিল ১ কোটি ৩৮ লাখ ৯৬ হাজার ৮৩৪ টাকা। ৫ বছর পরে তাঁর দেনার পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫ লাখ ৯৮ হাজার ২২ টাকা।