গাইবান্ধা সরকারি কলেজে ১৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক মাত্র ৫৩ জন

শিক্ষকসংকটের কারণে কলেজের দুই-তৃতীয়াংশ ক্লাসই হচ্ছে না। শ্রেণিকক্ষে এসে প্রায়ই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

জেলার শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ গাইবান্ধা সরকারি কলেজ। উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে ১৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করেন। কিন্তু তাঁদের পাঠদানের জন্য আছেন মাত্র ৫৩ জন শিক্ষক। খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েও শিক্ষকের অভাব পূরণ হচ্ছে না। ফলে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। 

গাইবান্ধা-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক ঘেঁষে ১৩ একর জমির ওপর ১৯৪৭ সালে কলেজটি গড়ে ওঠে। যা ১৯৮০ সালে সরকারি হয়। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৫৬ সালে পাস কোর্স এবং ১৯৯৬-৯৭ সালে ১৪টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) শাখা চালু হয়। স্নাতকোত্তর চালু হয় ১৯৯৯ সালে। কলেজে বর্তমানে শিক্ষার্থী ১৪ হাজার ১১৫ জন। এর মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকে ১ হাজার ৯৬০, স্নাতক (ডিগ্রি) ২ হাজার ৪৬০ এবং স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে ৯ হাজার ৬৯৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

কলেজের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কলেজটিতে শিক্ষকের পদ আছে ৮২টি। এর মধ্যে শিক্ষক আছেন মাত্র ৫৩ জন। উপাধ্যক্ষসহ ২৯ জন শিক্ষকের পদ শূন্য। সংকট মোকাবিলায় কলেজের টাকায় ছয়জন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া কর্মচারী দরকার ৪৮ জন, আছেন মাত্র ৭ জন। এ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

শিক্ষকেরা বলছেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও এর মানোন্নয়নের জন্য গঠিত এনাম কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী যেসব কলেজে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর বিষয় আছে, সেসব কলেজে প্রতিটি বিষয়ের জন্য ১২ জন করে শিক্ষক থাকার কথা। এ হিসাবে এ কলেজে ১৪টি স্নাতক (সম্মান) বিষয়ের জন্য ১৬৮ জন, ২টি স্নাতকোত্তর বিষয়ের জন্য ৮ জন এবং অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ মিলে ১৭৮ জন শিক্ষক দরকার। ওই কমিশনের হিসাবে ৯৬ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। প্রায় প্রতিটি বিভাগেই পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। প্রভাষক পদে সংকট বেশি।

স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ১০টায় শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হই, কখন স্যার আসবেন। কোনো দিন আসেন, কোনো দিন বসে থেকেই দিন পেরিয়ে যায়।’

উচ্চমাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়ে সপ্তাহে অন্তত ৩১টি ক্লাস হওয়ার কথা বলে জানালেন এক শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুই-তৃতীয়াংশ ক্লাসই হচ্ছে না। মাত্র একজন-দুজন শিক্ষক দিয়ে মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর) কোর্স পড়ানো হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক চেয়ে মাউশিতে আবেদন জানানো হয়েছে। প্রতি মাসে তাগাদাও দেওয়া হচ্ছে। 

গাইবান্ধা শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার অভিভাবক ফেরদৌস জুয়েল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অনেক আশা নিয়ে মেয়েকে নিজ জেলার কলেজে অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি করিয়েছেন। শিক্ষক না থাকার কারণে এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, এ বিভাগে ১৪ জন থাকার কথা। আছেন দুজন শিক্ষক। এর মধ্যে একজন প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। আরেকজনের পক্ষে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শাখায় সপ্তাহে অন্তত ৩১টি ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিভাগে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।