চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে আহত করার মামলার কারামুক্ত ২ আসামিকে ফুলের মালায় বরণ

জামিনে মুক্ত হওয়া মো. শফি হাওলাদার ও মোহন ভূঁইয়াকে ফুলের মালা পরিয়ে দিচ্ছেন যুবলীগ কর্মীরা। রোববার দুপুরে পটুয়াখালী জেলা কারাগারের সামনে
ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় করা মামলার দুই আসামি জামিনে মুক্ত হয়েছেন। তাঁরা হলেন মো. শফি হাওলাদার (৪৯) ও মোহন ভূঁইয়া (৪০)।

রোববার দুপুর দুইটার দিকে কারামুক্ত হন তাঁরা। এরপর তাঁদের দুজনকে কালাইয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. মিজান মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিন বাবুর্চির নেতৃত্বে যুবলীগের কর্মীরা ফুলের মালা দিয়েছেন। তাঁরা সবাই স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজের অনুসারী বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে ওই মামলার ১০ আসামি গত ১৭ মে পটুয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত দুই পক্ষের শুনানি শেষে ছয় আসামিকে জামিন দেন এবং চারজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

তাঁরা হলেন বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এনামুল হক ওরফে আলকাচ মোল্লা (৫০), শফি হাওলাদার (৪৯), মোহন ভূঁইয়া (৪০) ও মো. লিমন (৩৪)। পরে জেলা জজ আদালতের মাধ্যমে আলকাচ ও মো. লিমন জামিন পেলেও শফি হাওলাদার ও মোহন ভূঁইয়া জামিন পাননি। তাঁরা দুজন হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার পর আজ (রোববার) দুপুরে কারামুক্ত হন।

আরও পড়ুন

কালাইয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহীন বাবুর্চি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শফি হাওলাদার ও মোহন ভূঁইয়া কারাগার থেকে বের হওয়ার পর কারাগারের মূল ফটকের সামনে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মিজান মোল্লা ও সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিনসহ শতাধিক নেতা-কর্মী ফুলের মালা দিয়ে তাঁদের শুভেচ্ছা জানান।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দীন ফরাজি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগের একজন উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করেছেন। ওই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অথচ তাঁদের জামিনে একদল খুশি হলো। তাঁদের ফুলের মালা দিয়ে পুরস্কৃত করলেন। আসলে তাঁরা রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত।’

উপজেলা আওয়ামী লীগ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারের নেতৃত্বে ১০-১৫ হাজার নেতা–কর্মী আনন্দ র‍্যালি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের (জনতা ভবন) দিকে যাচ্ছিলেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের গেটের পূর্ব পাশে পৌঁছালে গাড়ির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের সামনে সন্ত্রাসীরা লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ওই আনন্দ র‍্যালিতে হামলা চালায়। হামলায় আবদুল মোতালেবের ডান হাতের তৃতীয় আঙুল কেটে চামড়ার সঙ্গে ঝুলে থাকে। তাঁর বুকের ডান পাশে ও ডান হাতের কনুইয়ের ওপরের অংশে জখম হয়। ডান পা ভেঙে যায় ও মাথায় আঘাত লাগে।

আরও পড়ুন

এ ঘটনার ২১ দিন পর রোববার ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, বাউফল থানার ওই সময়কার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুনের সামনে কালাইয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য মোহাম্মদ শফি হাওলাদারের নেতৃত্বে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেবের ওপর হামলা করা হয়। একপর্যায়ে আবদুল মোতালেব সড়কের ওপর শুয়ে পড়েন। এরপরও শফি হাওলাদার, সজীব দাসসহ কয়েকজন তাঁকে কোপাতে ও পেটাতে থাকেন।

এ ঘটনার ১৪ দিন পর গত ২ এপ্রিল রাতে বগা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. দিদারুল ইসলাম বাদী হয়ে বাউফল থানায় মামলা করেন। এতে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান এস এম ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে মনির হোসেন মোল্লা ১ নম্বর ও তাঁর ছোট ভাই ইউপি চেয়ারম্যান আলকাচ মোল্লাকে ২ নম্বর আসামি করা হয়। মামলায় মোট ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা সবাই স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজের অনুসারী। তাঁদের মধ্যে মনির হোসেন ও আলকাচ সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ভাতিজা।

আরও পড়ুন