কুমিল্লায় অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে যুবককে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে এক যুবককে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
নির্যাতনের শিকার যুবকের পরিবারের দাবি, ষড়যন্ত্র করে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে তাঁকে মারধর করে পরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের উনকোট গ্রামে ওই যুবককে নির্যাতন করা হয়।
এ ঘটনার আগে গত মঙ্গলবার রাতে চৌদ্দগ্রামে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ওই নারীকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য মারধর করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। ওই ঘটনার পরদিন স্থানীয়ভাবে সালিস বৈঠক বসে। সেখানে নির্যাতনের শিকার নারীকে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়।
গতকাল ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরা এক যুবককে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে। কয়েকজন মিলে তাঁকে খাটের ওপর ফেলে লাথি মারছেন। পাশে এক নারী তাঁর শিশুসন্তান কোলে নিয়ে চিৎকার করছেন। নির্যাতনের শিকার যুবক বারবার বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন; কিন্তু নির্যাতনকারীরা থামছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার যুবকের নাম মনছুর মিয়া (৩৫)। তিনি শুভপুর ইউনিয়নের কটপাড়া গ্রামের হাফেজ আহমেদের ছেলে। পেশায় কাঠমিস্ত্রি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রবাসীর বাড়িতে কাঠের কাজ করতে গিয়ে ওই নারীর সঙ্গে মনছুরের পরিচয় হয়। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি প্রবাসীর বাড়িতে গেলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে ধরে নির্যাতন শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে প্রবাসী ভিডিও কলে এসে স্ত্রীকে তালাক দেন। পরদিনই তিনি দেশে ফেরেন।
তবে পুরো ঘটনাটিকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন মনছুর মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি প্রবাসীর ঘরে কাজ করতে গিয়ে ওই নারীর সঙ্গে পরিচয় হয়; কিন্তু বুধবার সন্ধ্যায় কাজের বাকি টাকা আনতে গেলে উনকোট গ্রামের নাছির ও সজীবের নেতৃত্বে কিছু লোক আমাকে আটক করে মিথ্যা অভিযোগে মারধর করেন। তাঁরা আমাকে মারধর করেছেন; নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন। পরে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।’
মনছুরের বাবা হাফেজ আহমেদ বলেন, তাঁর ছেলে ঘরের কাজের টাকার জন্য গিয়েছিল। তারা ষড়যন্ত্র করে তাকে আটক করে অমানবিক নির্যাতন করেছে। তিনি এ ঘটনার বিচার চান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রবাসী ও তাঁর স্ত্রী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ঘটনায় জড়িত অন্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আছেন।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। নির্যাতনের শিকার যুবক থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। তবে আমরা চেষ্টা করছি, ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আটকের।’