বরইয়ের বলে সচ্ছল মৌলভীবাজারের গিয়াস

পরপর দুটি চাকরি হারিয়ে অনেকটা দিশাহারা অবস্থা। বিকল্প অবলম্বন খুঁজতে স্ট্রবেরির চাষ করেন। তাতেও বিপর্যয়। এ রকম একটা সময়ে ঘুরে দাঁড়াতে পথ দেখিয়েছে বলসুন্দরী ও থাই আপেল কুল বা বরই। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের একামধুতে মো. গিয়াস উদ্দিন শ্রম ও ভালোবাসায় তৈরি করেছেন এই বাগান। প্রতিবেশীদের কাছে তিনি এখন আদর্শ।

সম্প্রতি একামধু গ্রামে গিয়ে মনু নদের পাড়ে গিয়াস উদ্দিনের কুল-বরইয়ের বাগানের দেখা মিলল। বাগানের সারি সারি গাছে ছোট-বড় কাঁচা-পাকা বরই ঝুলে আছে। গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পরপর দুটি চাকরি হারিয়ে তিনি বেশ অসুবিধায় পড়ে যান। তিনি কৃষিতে কিছু করার ইচ্ছা পোষণ করেন। ২০১৪ সালে কৃষি বিভাগ থেকে একটি প্রশিক্ষণ নেন। সেই প্রশিক্ষণে তিনি ফসলের রোগ, রোগের লক্ষণ, ফসলের প্রয়োজনীয় খাদ্য, ঘাটতি ও অপুষ্টির বিষয়ে জেনেছিলেন।

এই কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, ২০১৪ সালে তিনি এলাকাতে স্ট্রবেরি চাষ করেন। প্রথম বছর মোটামুটি লাভের মুখ দেখেন। পরের বছরও লাভ হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে তিনি স্ট্রবেরি চাষ করে বিপর্যয়ের মুখে পড়েন। কী করবেন, কীভাবে সংসার চলবে—এসব ভাবনা থেকে বরই চাষের সিদ্ধান্ত নেন। ২০২১ সালে একামধুতে নিজের ৩০ শতাংশ জমিতে শুরু করেন কুল-বরইয়ের চাষ। যশোর থেকে বলসুন্দরী (অস্ট্রেলিয়ান আপেল কুল), থাই আপেল কুল ও কাশ্মীরি আপেল কুলের ২০০ চারা এনে লাগান। এতে তাঁর খরচ হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। পরের বছর থেকে বরই বিক্রি করছেন।

গিয়াস উদ্দিনের ভাষ্য, প্রথম বছর তিনি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার বরই বিক্রি করেন। পরের বছর ৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকার বরই বিক্রি করেন। আরও ৬০ শতাংশ জমি ১০ হাজার টাকায় দুই বছরের চুক্তিতে ইজারা নিয়ে তিনি কুলের বাগান করেন। বলসুন্দরী, থাই আপেল কুলের সঙ্গে যুক্ত করেন টক-মিষ্টি হাইব্রিড জাতের বরই। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত তিন লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছেন। আরও দুই লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবেন বলে তাঁর আশা। বাজারজাত করতে কোনো সমস্যা নেই। শহর থেকে পাইকার এসে কিনে নিয়ে যান। এই আয়েই চলে তাঁর পাঁচ সদস্যের পরিবার।

বেশির ভাগ সময় গিয়াস উদ্দিন নিজেই বাগানের পরিচর্যা করেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, বৃষ্টি না হলে দুই থেকে তিনবার সেচ দিতে হয়। মনু নদের পাড়ে বাগান হওয়ায় পানির সংকট নেই। তবে প্রচুর রোগবালাইয়ের আক্রমণ আছে। এই রোগবালাই শনাক্ত করার দক্ষতা না থাকলে ফল টেকানো মুশকিল। তিনি আরও জমি ইজারা নিয়ে বাগান বাড়ানোর চিন্তা করছেন।

এলাকার অনেকে গিয়াস উদ্দিনের দেখাদেখি বরইবাগান করেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন আছির মিয়া, জরিপ মিয়া, আরমান মিয়া, রাসেল মিয়া ও ছালেক মিয়া। আরও অনেকে বরইবাগান করার আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ ব্যাপারে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমি সবাইকে পরামর্শ দিই। বাগান দেখতে অনেক পর্যটক আসেন। গাছ থেকে বরই পেড়ে খান, ঘুরে বেড়ান, মজা করেন। এসব দেখতে আমার ভালো লাগে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, জেলায় ২০২ হেক্টর জমিতে কুল (বরই) চাষ হয়েছে। কতগুলো বাগান আছে অনেক টাকা আয় করছে। বলসুন্দরী কুল খুবই সম্ভাবনাময়। ভালো ব্যবসা করতে পারবেন কৃষকেরা। জেলায় ১৮ থেকে ২০টি ছোট-বড় কুলের বাগান আছে বলে জানালেন তিনি।