সুনামগঞ্জের হাজংপল্লিতে সম্প্রীতির দেউলী উৎসব

সুনামগঞ্জের হাজংপল্লিতে সম্প্রীতির দেউলি উৎসবে নৃত্য পরিবেশন করে শিশুরা। গতকাল বুধবার বিকেলে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কাইতকোনা গ্রামে সুনামগঞ্জের হাজংপল্লিতে সম্প্রীতির দেউলি উৎসবছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম কাইতকোনা। এ গ্রামের বাসিন্দাদের অধিকাংশই হাজং সম্প্রদায়ের। এ হাজংপল্লির বাসিন্দাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রীতির ‘দেউলি উৎসব’।

‘সংঘাত নয়, শান্তি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ি’ স্লোগানে গতকাল বুধবার এ উৎসব হয়। এর আয়োজক ছিল ‘বিশ্বম্ভরপুর ইয়ুথ পিচ অ্যাম্বাসেডর গ্রুপ’। বিকেলে ছিল সমাপনী ও সাংস্কৃতিক আয়োজন।

আয়োজকদের ভাষ্য, হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী দেউলি পৌষ উৎসবের মূল লক্ষ্য বিলুপ্তপ্রায় লোকজ ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করা এবং হাজং জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশ।

উৎসবের উদ্বোধন করেন স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীণ সংগীতশিল্পী চন্দনা হাজং। বিশ্বম্ভরপুর ইয়ুথ পিচ অ্যাম্বাসেডর গ্রুপের সমন্বয়কারী কুহিনুর বেগমের সভাপতিত্বে ও সংগঠক সামছুল কবিরের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী আলোচনায় আরও অনেকেই বক্তব্য দেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন বিশ্বম্ভরপুর পিচ ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপের পিচ অ্যাম্বাসেডর সিরাজ খন্দকার, সমন্বয়কারী ফুলমালা বেগম, সুনামগঞ্জ সদর পিচ অ্যাম্বাসেডর সিরাজুল ইসলাম, সদস্য নুরুল হাসান, মসিউর রহমান ও কর্ণ বাবু দাস। স্বাগত বক্তব্য দেন দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের প্রতিনিধি কুদরত পাশা।

বক্তারা বলেন, হাজং সম্প্রদায় একটি ঐতিহ্যপ্রিয় ও সংস্কৃতিমনা জনগোষ্ঠী। তাদের কৃষিভিত্তিক ও ধর্মীয় অনেক উৎসব আজ বিলুপ্তির পথে। দেউলি পৌষ উৎসব হাজং সম্প্রদায়ের অন্যতম বর্ণিল ও জীবনঘনিষ্ঠ উৎসব হলেও দীর্ঘদিন ধরে তা আয়োজনের বাইরে ছিল। এবার এই উৎসব আয়োজিত হওয়ায় হাজংপল্লিতে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে।

কুদরত পাশা জানান, এ আয়োজনের মাধ্যমে হাজং জনগোষ্ঠী যেন নিজেদের সাংস্কৃতিক পরিচয়, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির প্রতি আরও সচেতন হয় এবং গর্ববোধ করে—সেই লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ। আধুনিকায়নের চাপে অনেক লোকজ উৎসব হারিয়ে গেলেও দেউলির মতো প্রাচীন উৎসবের পুনরুজ্জীবন হাজং সংস্কৃতিকে নতুন করে শক্তিশালী করবে বলে তাঁদের আশাবাদ।

আলোচনা সভা শেষে শুরু হয় হাজং সম্প্রদায়ের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে গাঁও, সন্ধানী, লিওয়াটানা, আহিসে বৈশাখী নৃত্য পরিবেশন করেন হাজং নারী ও শিশুরা। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত হাজং শিল্পীরা নৃত্য ও সংগীতের মাধ্যমে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের শেষ হয় পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে।