দুদকে অভিযোগ করা শরীয়তপুরের সেই ব্যবসায়ীকে হাতুড়িপেটা

শরীয়তপুর নামে আছে। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যবসায়ী এসকেন্দার ঢালী। বৃহস্পতিবার রাতেছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরীর ব্যবসায়ী এসকেন্দার ঢালীকে (৪৫) হাতুড়িপেটা করে পা ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের কোটাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার সময় বিসিকের উপব্যবস্থাপক (ডিএম) মোহাম্মদ মনির হোসেনকে দুপুরে গ্রেপ্তার করে দুদক।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এসকেন্দার ঢালী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিসিকের ডিএম আমার একটি ফাইল আটকে রেখে ঘুষ নিয়েছেন। দুদক তাঁকে হাতেনাতে আটক করেছে। ওই ঘটনার জেরে তাঁর লোকজন আমাকে সড়ক থেকে তুলে নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে। মাস্ক পরা থাকায় আমি তাদের চিনতে পারিনি।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এসকেন্দার ঢালী বিসিক শিল্পনগরী থেকে জেলা শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। কোটাপাড়া মোড়ে এলে কয়েকজন ব্যক্তি তাঁকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে পাশের একটি বিদ্যালয়ের পেছনে নিয়ে যান। সেখানে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তাঁর বাঁ পা ভেঙে দেওয়া হয়। দুর্বৃত্তরা তাঁকে মারধর করার পর একটি অটোরিকশায় তুলে দেন। পরে স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মানসুরা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এসকেন্দারকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর কারণে বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচে ভেঙে গেছে। তাঁর চিকিৎসা চলছে।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এসকেন্দার নামের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক বিসিকের উপব্যবস্থাপককে গ্রেপ্তার করে। ওই ঘটনার জেরে কিছু দুর্বৃত্ত তাঁকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। ওই ব্যবসায়ী কাউকে চেনেননি। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর শহরের প্রেমতলা এলাকায় অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরীতে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ১০০টি প্লট রয়েছে। সম্প্রতি ওই কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক মনির হোসেনের বিরুদ্ধে শিল্পমালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ঘুষ গ্রহণ করার অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে মালিক মনির হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকে লিখিত অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী এসকেন্দার ঢালী। ওই ব্যক্তি আজ দুপুরে বিসিক কার্যালয়ে মনির হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে যান। এ সময় দুদকের একটি দল অভিযান চালিয়ে ঘুষের টাকাসহ মনির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। দুদক মাদারীপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক আতিকুর রহমান এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন।

দুদকের এজাহার সূত্রে জানা যায়, চিকন্দী এলাকার আবুল কালাম ঢালী ২০০৯ সালে ‘মেসার্স ঢালী মিনারেল ওয়াটার’ নামের একটি কারখানা স্থাপনের জন্য ৪ হাজার ৫০০ বর্গফুটের একটি প্লট বরাদ্দ পান। দীর্ঘদিন কারখানা চালু না করার কারণে বিসিকের প্রধান কার্যালয় থেকে তাঁর প্লটের বরাদ্দ বাতিল করে দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তি বর্তমানে ওমানপ্রবাসী। তাঁর চাচাতো ভাই এসকেন্দার ঢালীকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য তিনি আমমোক্তার নিযুক্ত করেন। এসকেন্দার ঢালীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই প্লট আবার তাঁদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় মাদারীপুরের উপপরিচালক আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিসিকের উপব্যবস্থাপক এক ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুষ দাবি করেন, এমন একটি অভিযোগ পান। খবর পান, বৃহস্পতিবার ওই ব্যবসায়ী ঘুষের টাকা দেবেন। দুদকের একটি দল সেখানে নজরদারি করে। দুপুরে উপব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে তাঁকে আটক করা হয়। এরপর দুদকে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রাতে তাঁকে আদালতে নেওয়া হবে।