ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতন: প্রকাশ্য প্রতিবাদটাই কাম্য

রায়হান রাইন
ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা আমাদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে নীরবে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিচ্ছবি। তবে এখানে ভিন্নতা এটাই যে নির্যাতনের শিকার ছাত্রী একদিকে যেমন অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস দেখিয়েছেন, ঠিক একইভাবে ভেঙে দিয়েছেন নারী হিসেবে পরিচয় গোপন রেখে আড়ালে থাকার প্রচলিত দেয়ালটিকে। নির্যাতনের প্রকাশ্য প্রতিবাদ করে প্রকাশ্যে আসাটাই কাম্য।

শুধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর নানাভাবে শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের শিকার হন। এ সময়টাতে একজন শিক্ষার্থী পরিবার থেকে দূরে এসে অভিভাবক ও বন্ধুহীন অবস্থায় থাকেন। শিক্ষার্থীদের এ অসহায়ত্বের সুযোগ নেন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা পদধারী শিক্ষার্থীরা। এসব ঘটনার প্রতিবাদ মানেই বিষয়টাকে সবার গোচরে আনা, সচেতনতার বার্তা দেওয়া। এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন ভুক্তভোগীর বিচার পাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়, অন্যদিকে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্টরাও পদক্ষেপ নিতে পারেন। এটা হলেই এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।

প্রতিবাদের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিপীড়কদের পক্ষে অবস্থান নেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশাসন যথাযথ প্রক্রিয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পরে আইনের আশ্রয় নিয়ে অপরাধীরা আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একাধিক নজির রয়েছে। সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে ঘটনার উপস্থাপন ও বিচারের ক্ষেত্রে আইনগত দিকগুলো গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই ছাত্রীর প্রতিবাদ সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নিপীড়নের পরিস্থিতিকে নতুন করে সামনে এনেছে। অসহায় শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষে এসে নীরবে যে নির্যাতন সহ্য করেন, সেগুলোর ক্ষেত্রে এটি একটি নজিরবিহীন প্রতিবাদ।

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের কেউ সামনে এসে এভাবে দাঁড়ানোর সাহস পান না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা এটি চেপে যান, এমনটাই আমরা দেখতে পাই। নির্যাতিতদের পক্ষে এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে এটি প্রতিবাদের একটা অসামান্য প্রতীক হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমের বাস্তবতার সঙ্গে এ ধরনের নিপীড়নের সম্পর্ক আছে। কারণ, গণরুমে একসঙ্গে অনেককে পাওয়া যায়, যাঁদের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে, নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে নিজেদের মিছিলে ভেড়ানো যায়।

আমরা বিভিন্ন সময়ে শ্রেণিকক্ষে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের চোখে ঘুমঘুম ভাব দেখি। পরে জানা যায়, হলের সিনিয়ররা তাঁদের সারা রাত জাগিয়ে রেখেছিলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা অনেকটাই কমে এসেছে। প্রশাসন বেশ কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে হল প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং আইনিব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা নির্মূল করা সম্ভব। অপরাধী যে-ই হোক না কেন, তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, এটাই কাম্য।

রায়হান রাইন: অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়