রাঙ্গুনিয়ার শান্তিনিকেতনের মিষ্টির স্বাদই আলাদা

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার শান্তিনিকেতনের মিষ্টি
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় মিষ্টির কথা উঠলেই শান্তিনিকেতনের মিষ্টির নাম আসে। স্বাদে অতুলনীয় এই মিষ্টির জুড়ি নেই। এলাকার মিষ্টিপ্রেমী মানুষ যেমন এখানে ভিড় জমান, তেমনি বাইরে থেকেও অনেকে আসেন।

স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের শান্তিনিকেতন গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনের সামনে এই মিষ্টির দোকান। সামনে পাকা ও দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো দোকান, পেছনে কারখানা। কারখানাতেই কথা হয় মিষ্টির দোকানের মালিক গুণলাল দের সঙ্গে। তিনি বলেন, একসময় তিনি পানের বরজ করতেন। পান বিক্রি করেই সংসার চালাতেন। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে তাঁর পুরো পানের বরজ নষ্ট হয়ে যায়। কোনো উপায় না দেখে শান্তিনিকেতন গ্রামে তিনি ছোট একটি কাঁচা ঘর তৈরি করে চায়ের দোকান দেন। গরুর দুধ দিয়ে চা বানাতেন। অনেক সময় দুধ বেশি সংগ্রহে থাকত, তখন নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকত। দুধ নষ্ট না করে ছানা বের করে মিষ্টি বানানোর বিষয়টি তাঁর মাথায় আসে।

গুণলাল দে বলেন, ‘এখন দুধের জোগান কম। চাহিদা থাকলেও দুধের জোগান কম থাকায় অনেক সময় মিষ্টি কম তৈরি করতে হয়। আমরা মান ধরে রাখার চেষ্টা করি। আমাদের কোথাও কোনো শাখা নেই। এই অঞ্চলের কিছু কিছু জায়গায় আমাদের নাম ব্যবহার করে মিষ্টি বিক্রি করছেন যাঁরা, তাঁদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’

মিষ্টির প্রস্তুতপ্রণালি সম্পর্কে গুণলাল দে বলেন, ‘মিষ্টি তৈরির মূল উপাদান গরুর দুধ। দুধ জ্বাল দিয়ে ছানা তৈরি করে ছানার সঙ্গে অল্প পরিমাণ ময়দা মেশানো হয়। তবে ছানার ঘনত্ব যত বেশি হয়, মিষ্টি তত বেশি সুস্বাদু হয়। ময়দা বেশি মেশালে মিষ্টির স্বাদ কমে যায়। তাই আমরা ময়দা তেমন দিই না।’ তিনি বলেন, পাঁচ লিটার গরুর দুধে এক কেজি ছানা হয়। ১ কেজি ছানা থেকে ২ কেজি ৭০০ গ্রাম মিষ্টি বানানো যায়। প্রতি কেজি মিষ্টি ২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ২২টি মিষ্টি হয়।

এই দোকানে প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ মণ মিষ্টি বিক্রি হয়। তবে অনুষ্ঠান উপলক্ষে অর্ডার দিলে আরও বেশি মিষ্টি বানিয়ে বিক্রি করা হয় বলে জানান দোকানের মালিক।

উপজেলার রোয়াজারহাটের দোকানি সাইফুল আলম বলেন, ‘মিষ্টি কিনতে কোনো ক্রেতা এলে শান্তিনিকেতনের মিষ্টি ছাড়া অন্য মিষ্টি কিনতে চান না।’ পাশের কাপ্তাই উপজেলার বাসিন্দা টিটু দেব বলেন, ‘শান্তিনিকেতনের মিষ্টি স্বাদ ও মানে অন্য মিষ্টির তুলনায় আলাদা। তাই রাঙ্গুনিয়ায় এলে শান্তিনিকেতনের মিষ্টির দোকানে যাই। মিষ্টি নিজে খাওয়ার পর পরিবারের জন্যও নিয়ে যাই।’

স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউপির চেয়ারম্যান মো. নুরুল্লাহ বলেন, ‘মিষ্টির দোকান ও কারখানা ইউপির সামনেই। পরিষদে কোনো অতিথি এলে শান্তিনিকেতনের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এখানকার মিষ্টির স্বাদটাই আলাদা।’