ভালো বন্ধু মনের পাহারাদার 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের কনফারেন্স কক্ষে গতকাল মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: প্রথম আলো

সারা দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সবচেয়ে অবহেলিত। মন যে কী, সেটা আমরা বুঝে উঠতে পারি না। মন হচ্ছে একটা নদীর মতো। এর চলার পথে অনেক বাধা আসবে। মন থাকলে মন খারাপ হবেই। মন অনেক কথা বলে। মন হচ্ছে একটা শক্তি। মন খারাপ হলে সেটা অপশক্তি হয়ে যায়। মনকে ভালো রাখতে হলে মনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। শরীরের মতো মনের যত্ন নিতে হবে। মনের পাহারাদার ভালো বন্ধু।

গতকাল শুক্রবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ইউনিমেড ইউনিহেলথের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতায় এবং বন্ধুসভার আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের কনফারেন্স কক্ষে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালা সকাল আটটায় শুরু হয়ে চলে বেলা একটা পর্যন্ত। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারী ৮০ শিক্ষার্থীকে সনদ দেওয়া হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া জেসমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান মামুন হুসাইন, বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ পারভেজ ও ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) সাফায়েত মাহমুদ।

মানসিক স্বাস্থ্য বনাম মানসিক রোগ, ধরন, প্রতিকার, প্রতিরোধ; আত্মহত্যার প্রতিরোধ ও প্রতিকার; মন কী, কীভাবে নেওয়া যায় মনের যত্ন ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করেন অধ্যাপক মামুন হুসাইন। তিনি বলেন, ‘মন নানাভাবে দৌড়ে বেড়ায়। মন ছয়টি ঋতুর চেয়ে বিচিত্র। কেউ ইচ্ছা করে মন খারাপ করেন না। মস্তিষ্কের মাধ্যমে আমাদের আবেগ তৈরি হয়। সমাজের খারাপ জিনিসগুলো আমাদের আক্রান্ত করে। যখন কেউ বিষণ্ন হয়ে পড়েন, তিনি যত সফল ব্যক্তি হন না কেন, তখন বুঝতে হবে, কোথাও কোনো সমস্যা হয়েছে। বিষণ্ন মানুষ ধীরে ধীরে আত্মহননের দিকে যান। বন্ধুদের থেকে দূরে চলে যান। আত্মহনন খুবই জটিল একটা ব্যাপার। বেশির ভাগ আত্মহত্যার ক্ষেত্রে “সাইকিয়াট্রিক ডিজঅর্ডার” থাকে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে সবাইকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজনে বন্ধুদের কাউন্সিল করে পাশে থাকতে হবে।’

‘মনের যত্নে আসক্তি–মুক্তি’ শীর্ষক সেশনে অধ্যাপক তানজির আহম্মেদ বলেন, ‘আসক্তি শুধু নেশা বা মাদকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা দৈনন্দিনের অনেক জিনিসের প্রতি আসক্ত হয়ে আছি। সব আসক্তির ফল সব সময় খারাপ। অপরাধবোধ মাদকসেবীদের আসক্তি বাড়িয়ে দেয়। অপরাধবোধ না জাগিয়ে তাঁদের সচেতন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বন্ধু, পরিবার ও স্বজনদের ভূমিকা রাখতে হবে। কোনো ঘটনা বা বিষয় আমাদের মন খারাপ করায় না; বরং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিই মন খারাপের কারণ হিসেবে কাজ করে। একজন মানুষ শুধু নিজের নয়, তিনি সবার—এই কথা চিন্তা করতে পারলে আত্মহত্যা অনেকাংশে কমে আসবে।’

ফরহাদ পারভেজ বলেন, মেডিকেল সায়েন্স বলে, মন হচ্ছে ব্রেন। মন অনেক কথা বলে। মন হচ্ছে একটা শক্তি। মন খারাপ হলে সেটা অপশক্তি হয়ে যায়। মনকে ভালো রাখতে হলে মনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। মনের পাহারাদার ভালো বন্ধু। এ জন্য বিভিন্ন সংগঠন করতে হবে।