নাটোরে পত্রিকার সম্পাদকের দুই হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে

হামলায় আহত চন্দ্রকলা কলেজের প্রভাষক ও স্থানীয় দৈনিক প্রান্তজন পত্রিকার সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম। রোববার দুপুরে নোটার সদর হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

নাটোরে কলেজশিক্ষক ও স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের ওপর হামলা চালিয়ে দুই হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। ওই ব্যক্তির নাম সাজেদুল ইসলাম (সেলিম)।

তাঁর দাবি, আজ রোববার দুপুরে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে সদর উপজেলার চন্দ্রকলা বাজারে তিনি বিএনপি কর্মীদের হামলার শিকার হন। তাঁকে কলেজে আসতেও বারণ করা হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন নাটোরের গণমাধ্যমকর্মীরা।

সাজেদুল ইসলাম দৈনিক পত্রিকা প্রান্তজনের সম্পাদক এবং চন্দ্রকলা কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক। নাটোর থানা ও সাজেদুলের বর্ণনা থেকে জানা যায়, সাজেদুল ইসলাম আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি চন্দ্রকলা বাজার এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয় বিএনপি কর্মী আব্দুল ওহাবের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন দুর্বৃত্ত তাঁর পথরোধ করে একটি চায়ের দোকানের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে তারা ওই শিক্ষকের মুঠোফোন কেড়ে নেয়। এরপর হকিস্টিক ও কাঠের বাটাম দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে সাজেদুলকে মাটিতে ফেলে রেখে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

হাসপাতালে যাওয়ার পথে সাজেদুল ইসলাম স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, প্রতিদিনের মতো একাই কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। বাজার এলাকায় আসামাত্র তাঁর ওপর হামলা চালান আব্দুল ওহাব ও তাঁর লোকজন। সাজেদুল কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি। নতুন কমিটি গঠন করা নিয়ে তাঁকে দোষারোপ করছিলেন আব্দুল ওহাব। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন সাজেদুল।
সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসা কর্মকর্তা ও অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ পলাশ কুমার সাহা জানান, এক্স-রে করে সাজেদুল ইসলামের দুই হাতের হাড় ভাঙা দেখা গেছে। অন্যান্য স্থানেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসা চলছে। আপাতত তাঁকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে।

ঘটনার পর থেকেই আব্দুল ওহাব পলাতক। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ। ফলে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ জানান, মারপিটের কোনো ঘটনাকেই তাঁরা সমর্থন করেন না। প্রভাষক সাজেদুল ইসলামকে যাঁরা আঘাত করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হলে তাতে দলের কারও কোনো আপত্তি নেই।

সাজেদুল ইসলামের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা। নাটোর ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের সভাপতি নাসিম উদ্দিন নাসিম বলেন, সাজেদুল ইসলাম নাটোরের স্থানীয় একটি পত্রিকার সম্পাদক। শিক্ষক হিসেবেও তিনি সমাদৃত। তাঁর ওপর হামলা নাটোরের সাংবাদিক সমাজ মেনে নিতে পারছে না। দায়ী ব্যক্তিরা যে দলেরই হোক, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওই সাংবাদিক নেতার।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মৌখিক খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলেই মামলা নেওয়া হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।