বৃষ্টির প্রভাবে আমন খেতে ফিরেছে প্রাণ

আমন মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বিপাকে ছিলেন কৃষকেরা। টানা বৃষ্টিতে স্বস্তি পেয়েছেন কৃষক।

পানির অভাবে ধানখেত ফেটে গিয়েছিল। বৃষ্টির পানি পেয়ে আবার তরতাজা হয়ে উঠেছে ধানের গাছ। গতকাল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

আমন মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বিপাকে ছিলেন কৃষকেরা। অনেকে সেচ দিয়ে আমন ধান রোপণ করেছেন। পরে ওই খেতে আরও সেচ দিতে হয়েছে। এতে তাঁদের বাড়তি খরচ হয়েছে। তবে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে আমনের খেতে প্রাণ ফিরেছে। কৃষকও স্বস্তি পেয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় জেলার তাপমাত্রার পাশাপাশি বৃষ্টিপাতের পরিমাণও রেকর্ড করে থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বুধবার থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত ৬৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১২৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার। সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এখানে ১৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আর কম বৃষ্টিপাত হয়েছে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়। সেখানে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১১ মিলিমিটার।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া, রাজাগাঁও ও আকচা এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, পথের ধারে সবুজ আমন খেত। কৃষক কোথাও কোথাও খেতের আগাছা নিড়ানিতে ব্যস্ত। আবার কোথাও কোদাল দিয়ে খেতের আইল (সীমানা) বেঁধে দিচ্ছেন। তাঁদের চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক।

কয়েক দিন বৃষ্টি না হওয়ায় খেতের মাটি ফেটে গিয়েছিল। খেতের ধানগাছ লালচে হয়ে যাচ্ছিল।
আনোয়ার হোসেন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মহেশপুর গ্রামের কৃষক

সদর উপজেলার মহেশপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন সাত বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করছেন। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি তাঁর মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি না থাকায় প্রথমে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করতে হয়েছে। এতে বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। কয়েক দিন বৃষ্টি না হওয়ায় খেতের মাটি ফেটে গিয়েছিল। খেতের ধানগাছ লালচে হয়ে যাচ্ছিল। ভালো ফলনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। গত বুধবার থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। ধানের খেত প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আগের তুলনায় আমনের বেশি ফলনের আশা করছি।’

সদর উপজেলার খড়িবাড়ী গ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার জানান, চলতি মৌসুমে তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। বৃষ্টিপাত দেরিতে হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ফলনও বেশ ভালো হবে।

এবার আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। আমনের আশানুরূপ ফলনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা এলাকার কৃষক প্রদীপ রায়। টানা বৃষ্টিতে ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘গত বছর ১২ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করে ১৩৮ মণ ধান পেয়েছিলাম। এ বছর ১৪৪–১৫০ মণ ধান পাওয়ার আশা করছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমন চাষ পুরোপুরি বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এবার তেমন বৃষ্টির দেখা মেলেনি। কৃষকদের শ্যালো যন্ত্র দিয়ে জমিতে সেচ দিতে হয়েছে। এতে তাঁদের বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। স্বাভাবিক বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কৃষকদের সেই দুশ্চিন্তা কেটে গেছে।

এদিকে নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার আমনের আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭২ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৭ হেক্টর বেশি। আমন রোপণের শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। কৃষকেরা সেচ দিয়ে ধানখেত রক্ষা করেছেন। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সেই আশঙ্কা অনেকটাই দূর হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, নীলফামারীর মাটি মূলত বেলে ও দোআঁশ। এ কারণে পানি আধা ঘণ্টার মধ্যে সরে যায়। এই বৃষ্টি কৃষির জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে আমন উৎপাদনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

তবে যাঁরা আগাম আলুর চাষ করেছিলেন, বৃষ্টির কারণে তাঁরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। অনেক কৃষক পানি জমে আলুর খেত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তবে কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ার কারণে মাটির তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। এই বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে গেছে। আগাম আলুর আবাদ কয়েক দিন পিছিয়ে গেলেও আলুর ফলন ভালো হবে। আর যাঁরা ইতিমধ্যে আলু রোপণ করেছেন, তাঁরা চাইলে ওই আলু তুলে রেখে পুনরায় জমিতে রোপণ করতে পারবেন।