টাঙ্গাইলে আ.লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ এলেই আসামি অসুস্থ
সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ এলেই কোনো না কোনো আসামি অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে পাঠানো হয় হাসপাতালে। আদালতে আসামি হাজির করা যায় না। তাই সাক্ষ্য গ্রহণও হয় না। এ কারণেই শেষ মুহূর্তে এসে পিছিয়ে যাচ্ছে টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার বিচারকাজ।
আজ বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এই মামলার অন্যতম আসামি টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি অসুস্থ। কারাগার থেকে তাঁকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁকে আদালতে আনা যায়নি। তাই সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। আগামী ১১ নভেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন তারিখ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর, ২৭ জুলাই, ২৫ মে ও ৯ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি আসামি অসুস্থ থাকার কারণে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) এস আকবর খান জানান, কোনো আসামি হাজতে থাকলে সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আদালতে তাঁকে হাজির করার বিধান আইনে রয়েছে। ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় গত কয়েকটি তারিখে জেলহাজতে থাকা আসামি হাজির না করানোর কারণে সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ফারুক হত্যা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। তারপর এই মামলার বাদীসহ ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। এখন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অশোক কুমার সিংহের সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি রয়েছে। এই সাক্ষ্য নেওয়া হলেই সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব শেষ হবে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারাগারে থাকা অবস্থায় সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খানের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে দুই সপ্তাহ আগে চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
মামলার বাদী নাহার আহমেদ বলেন, অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পর থেকে নানাভাবে সময়ক্ষেপণ করছেন আসামিরা। অভিযোগ গঠনের সময় এই মামলার আসামি আমানুর রহমান খান জেলহাজতে ছিলেন। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তাঁকে অন্তত ১০ বার আদালতে হাজির করা হয়নি। ফলে ওই সময় অভিযোগ গঠন পিছিয়ে যায়। পরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আসামি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যান। সে জন্য সাক্ষ্য গ্রহণ পিছিয়ে যায়। আসামিরা প্রভাবশালী। তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে বিচারপ্রক্রিয়া যাতে বিলম্ব করতে না পারেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বাদী।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে এই হত্যায় সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান ওরফে রানা ও তাঁর ভাইদের নাম উঠে আসে। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। এই মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর ছাড়াও তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খানসহ ১৪ আসামি রয়েছেন।