‘কম্বলটা পায়া ঠান্ডা থ্যাকি বাঁচনু’

মাছ কাটার কাজে জড়িত দরিদ্র নারীদের একটি করে কম্বল দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে নাটোর শহরের মাছবাজারেছবি: মুক্তার হোসেন

নাটোর শহর আজ শুক্রবার ভোর থেকে ছিল ঘন কুয়াশায় ঢাকা। দুপুর ১২টা বাজলেও কুয়াশা কাটেনি। ঠান্ডা বাতাসে খোলা আকাশের নিচে বসে হাড়কাঁপানো শীতে মাছ কাটছিলেন ষাটোর্ধ্ব এক নারী। এমন সময় নাটোর বন্ধুসভার এক সদস্য প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি কম্বল দিয়ে তাঁর শরীরটা ঢেকে দিলেন। মুহূর্তেই মাছ কাটা বন্ধ করে ওই সদস্যের দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে কিছু সময় চেয়ে থাকলেন তিনি।

চোখের কোণটা ততক্ষণে ভিজে গেল ওই নারীর। নাম জানতে চাইলে চোখ ফিরিয়ে বললেন, মরিয়ম বেওয়া। কাজের মধ্যেই সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় জানা গেল, ৯ কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে, ভ্যানে চেপে এসেছেন মাছ কাটার কাজ করতে। ১৩ বছর ধরে তিনি এই কাজ করে আসছেন। স্বামী অসুস্থ, ছেলে নেই। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। সংসারের হাল তাঁর হাতেই। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তাঁকে প্রতিদিন সকাল ৬টায় বাড়ি থেকে বের হতে হয়। বাড়ি ফেরেন বিকেলে। শুক্র ও শনিবার ছাড়া বাকি দিনগুলোতে তেমন একটা রোজগার হয় না বলে জানান মরিয়ম বেওয়া।

তাঁর মতো নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে নাটোর শহরের মাছবাজারে অন্তত ৩৩ জন নারী মাছ কাটার কাজ করেন। তীব্র শীতের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে তাঁদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই নারীদের প্রত্যেককে আজ দুপুরে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে একটি করে কম্বল উপহার দেওয়া হয়েছে। কম্বল পেয়ে তাঁরা সবাই খুশি। তাঁদের মধ্যে বাক্‌প্রতিবন্ধী রুবি খাতুন (৩৬) কথা বলতে না পারলেও চোখ-মুখ নাচিয়ে যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন, তাতে তাঁর ভালো লাগার কথা বোঝা গেল।
নিচাবাজারের বাসিন্দা সাবিত্রী রানী বলেন, ‘কম্বলটা পায়া ঠান্ডা থ্যাকি বাঁচনু। আরও দুডা হলে ভালো হতো। বাড়িত দুই মিয়া আছে। বাড়িত গ্যালি তো ওরা এইডা কাড়ি লিবিনি।’

কম্বল পেয়ে কানাইখালীর বিধবা নারী রুনু বেওয়া বলেন, ‘আমরা মাছ কুটি বলি কেউ দামই দেয় না। আপনারা যে আমাদের কথা মনে করিছেন, এতে খুশি হয়ছি।’ কালুর মোড়ের রুবা বেওয়া বলেন, ‘ভোরে উঠি বাজারে আসতে হয়। তখন রাস্তায় খুব ঠান্ডা লাগে। এখন কম্বলডা জাড়ায়ে আসতে পারবোনে।’

শীতার্ত দরিদ্র নারীদের একটি করে কম্বল দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে নাটোর শহরের মাছবাজারে
ছবি: প্রথম আলো

মাছ কাটার কাজে জড়িত ছাড়াও প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দুপুরে এনএস সরকারি কলেজ মাঠে শহর ও শহরতলীর আরও ৭০ জনের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন এনএস সরকারি কলেজের প্রভাষক ও বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা, প্রথম আলোর নাটোর প্রতিনিধি মুক্তার হোসেন, বন্ধুসভার সভাপতি মাহবুব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সুজন কুমার শীলসহ অন্য বন্ধুরা।

প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রান তহবিলে ১০০টি কম্বল দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি। এসব কম্বল প্রথম আলো ট্রাস্ট্রের পক্ষ থেকে নাটোরে বিতরণ করা হয়েছে।

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। হিসাব নম্বর: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪; ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন, ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই পেমেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।

আরও পড়ুন