নারায়ণগঞ্জে ঢাকাগামী যাত্রীরা তল্লাশি ও জেরার মুখে, গ্রেপ্তার ১৫

বুধবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় চেকপোস্টে
ছবি: প্রথম আলো

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঢাকাগামী দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের যাত্রীরা পুলিশের তল্লাশি ও জেরার মুখে পড়ছেন। আজ বুধবার দুপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন চেকপোস্টে ঢাকামুখী যাত্রীদের তল্লাশি ও জেরা করা হচ্ছে।

এ দিকে গতকাল বিকেল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে নাশকতার মামলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলী হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নবীর হোসেন (৪২), থানা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. আরমান (৩৫) ও বিএনপির কর্মী মেহেদী হাসান (২৪)।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড বা নাশকতা করতে না পারেন, এ কারণে মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসসহ সন্দেহভাজন বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছেন তাঁরা। এর আগে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে এই মৌচাক এলাকায় মশালমিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তাই পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে তাঁরা মহাসড়কে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছেন।

যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি ও ঢাকায় যাওয়ার কারণ জানতে চাচ্ছে পুলিশ। ৫০ বছরের নিচে প্রায়ই সবাইকে তল্লাশি ও জেরা করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন অনেককে বাস থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে।

ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচলকারী এশিয়া পরিবহন বাসের সুপারভাইজার মহিউদ্দিন বলেন, পুলিশ তাঁদের গাড়ির যাত্রীদের তল্লাশি করেছে। অনেক যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তাঁরা কী উদ্দেশ্যে ঢাকায় যাচ্ছেন। দলবদ্ধ হয়ে কেউ বাসে যাত্রী হিসেবে উঠে ঢাকায় যাচ্ছেন কি না, তাঁদের কাছে এসব জানতে চেয়েছে পুলিশ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আজ দুপুর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একদল পুলিশ দূরপাল্লার বাস ও বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের ১০ সদস্যের একটি দল চেকপোস্টে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে। শুধু দূরপাল্লার বাস নয়, ব্যক্তিগত গাড়ি ও ছোট পরিবহনেও তল্লাশি করছে পুলিশ।

চেকপোস্টে পুলিশের তল্লাশি নিয়মিত অভিযানের অংশ উল্লেখ করে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. আমীর খসরু প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে দুটিসহ জেলায় সাতটি চেকপোস্ট রয়েছে। সেখানে সন্দেহজনক বাসে ও যাত্রীদের তল্লাশি চালানো হচ্ছে। অযথা কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে চেকপোস্টে তল্লাশি চলছে।

ঢাকাগামী তিশা পরিবহনের একটি বাস থেকে দুই যাত্রীকে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় চেকপোস্টে
ছবি: প্রথম আলো

তল্লাশির নামে যাত্রীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আবু কালাম নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, জুলুমেরও শেষ আছে। এত জুলুম জনগণ মেনে নেবেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁয়ে মেঘনা টোল প্লাজা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আড়াইহাজার উপজেলার ছনপাড়া, জালাকান্দি এলাকা, রূপগঞ্জ থানার তিন শ ফুট, বালু সেতু ও তারাব বিশ্বরোড এবং ফতুল্লার সাইনবোর্ডে চেকপোস্ট রয়েছে। প্রতিটি চেকপোস্টে তল্লাশি ও ঢাকামুখী যাত্রীদের জেরা অব্যাহত আছে।

তিশা পরিবহনের বাস থামিয়ে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মো. রাসেল। তিনি বলেন, ৫০ বছরের নিচে যাত্রীদের ঢাকায় যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বোমা বা নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কেউ যাতে কিছু নিয়ে ঢাকায় যেতে না পারেন, এ কারণে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। অযথা কাউকে তাঁরা হয়রানি করছেন না।

নারায়ণগঞ্জে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মামুন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, যতই সমাবেশের সময় ঘনিয়ে আসছে, নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান আরও বাড়ছে। পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে নেতা-কর্মীরা ঘরছাড়া। তিনি আরও বলেন, পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করা হচ্ছে। স্বাভাবিক কাজকর্মে যেতেও মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে।