রেললাইনে নাশকতার চেষ্টা, আনসার সদস্যের মাফলারের নিশানায় রক্ষা
রেলস্টেশন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূর। রাতে এক সহকর্মীকে নিয়ে রেললাইন পাহারায় ছিলেন আনসার সদস্য ইফতেখার রহমান। হঠাৎ কিছুটা দূরে রেললাইনের ওপর আগুন জ্বলতে দেখেন তিনি। কাছে গিয়ে দেখেন রেললাইনের ওপর আড়াআড়িভাবে ফেলে রাখা কংক্রিটের স্লিপার। রেললাইন ও স্লিপারের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাধা বাঁশ ও গাছের লম্বা ডাল। এর ওপরে শুকনা কচুরিপানার স্তূপ। এরই মধ্যে শুনতে পান ট্রেনের হুইসেল। তৎক্ষণাৎ তিনি গলা থেকে মাফলার খুলে এক হাতে নিয়ে নিশানা ওড়ান। আর অন্য হাতে টর্চলাইট জ্বালিয়ে ট্রেন থামানোর সংকেত দিতে থাকেন। একপর্যায়ে পকেট থেকে বাঁশি বের করে সজোরে বাজাতে থাকেন তিনি। ট্রেন থেমে যায়। দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ট্রেনে থাকা শত শত যাত্রীর জীবন।
গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টার দিকে দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের পাহানপাড় এলাকার রেললাইনে এ ঘটনা ঘটে। বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দক্ষিণে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ওই রেললাইনের ওপর স্লিপার ফেলে দুর্বৃত্তরা নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ইফতেখার রহমান (৪৬) বিরামপুর উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নে আনসার ও ভিডিপির দলনেতা। তিনি ওই ইউনিয়নের চাকুল গ্রামের মৃত নিজামুদ্দিনের ছেলে। ঘটনার রাতে তিনি বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশনে আনসার ও ভিডিপি সদস্য নজিবর রহমানকে নিয়ে পাহারায় ছিলেন।
ইফতেখার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে সহকর্মীকে নিয়ে ১ নম্বর সিগন্যাল পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে হাঁটিছিলাম। তখন হঠাৎ করে রেললাইনের ওপর আগুন জ্বলতে দেখি। কাছে গিয়ে সেখানে রেললাইনের ওপর সিমেন্টের স্লিপারের সঙ্গে বাঁশ ও গাছের ডাল বেঁধে রাখা দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে গলা থেকে মাফলার খুলে ট্রেনের দিকে যেতে যেতে ওড়াতে থাকি। হাতে থাকা টর্চলাইট জ্বালিয়ে ট্রেনচালককে ট্রেন থামানোর সংকেত দিই। চালক ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে ট্রেন থামান।’
রেললাইনে নাশকতার খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম, সহকারী পুলিশ সুপার (বিরামপুর সার্কেল) মঞ্জরুল ইসলাম ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার। পরে স্থানীয় আনসার সদস্য ও রেলওয়ে কর্মীদের সহযোগিতায় রেললাইনের ওপরে রাখা স্লিপার, বাঁশ, কাঠ ও কচুরিপানা সরিয়ে ফেলা হয়।
বিরামপুর রেলস্টেশনের মাস্টার আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশনে রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে পৌঁছায়। পরে দুই মিনিট বিরতি দিয়ে ১০টা ৩৮ মিনিটে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পরক্ষণেই রেললাইনে পাহারারত একজন আনসার সদস্য মুঠোফোনে ৩৪৯–এর ১ থেকে ২ নম্বর কিলোমিটার পয়েন্টে রেললাইনের ওপর স্লিপার ফেলে আগুন লাগানোর খবর দেন। পুলিশ ও আনসার সদস্যের সহযোগিতায় রেললাইন থেকে স্লিপার সরানো হয়। রাত ১১টা ২৩ মিনিটে সীমান্ত এক্সপ্রেস খুলনার উদ্দেশে চলে যায়।
ওসি সুব্রত কুমার সরকার বলেন, রেললাইনের ওপর স্লিপার ফেলে ও আগুন ধরিয়ে দৃর্বৃত্তরা বড় ধরনের নাশকতার চেষ্টা করছিল। এ ঘটনায় আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে পার্বতীপুর রেলওয়ে থানায় একটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি বিরামপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হায়দার আলীকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।