খুলনা নগরী ঘিরে দিন দিন লোকসংখ্যা বাড়ছে। নগরের আশপাশে গড়ে উঠছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সিটি করপোরেশন এলাকার সীমানা আর বাড়েনি। ২০০৭ সালে সীমানা বাড়ানোর প্রস্তাবটি এখনো নথিতেই আটকে আছে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনা নগরকে ১৯৯০ সালে পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। সে সময় সিটি করপোরেশনের আয়তন ছিল ৪৫ দশমিক ৬৫ বর্গকিলোমিটার। গত ৩৩ বছর ধরে একই আয়তনে আছে শহরটি। সিটি করপোরেশনের সীমানা না বাড়লেও শহরের সীমানা ঠিকই বেড়েছে। সীমানার বাইরে থাকা নাগরিকেরা এখন সিটি করপোরেশনের মধ্যে আসতে চাচ্ছেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে সর্বশেষ পাঠানো চিঠিতে খুলনা সিটি করপোরেশনের আরও ৪০ দশমিক ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা সম্প্রসারণের জন্য বলা হয়েছে। তবে গত দুই বছর ধরে সিটি করপোরেশন সম্প্রসারণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের সীমানা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে। অনাপত্তিসহ সব ধরনের নথি মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন সেটি আটকে আছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ওই বিষয়টি সচিব কমিটির বৈঠকে তোলা হবে।
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) এলাকাটি দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ভৈরব ও রূপসা নদীর পাড় দিয়ে চলে গেছে উত্তর-পশ্চিম দিকে। নদীর অপর পাড়ে রূপসা ও দিঘলিয়া উপজেলা। এ কারণে নদীর ওপারে আর শহর সম্প্রসারিত হয়নি। তবে পশ্চিম পাশ ঘিরে সিটি করপোরেশনের সীমানার বাইরে গড়ে উঠছে শহর। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রস্তাবিত এলাকাগুলো পড়েছে সিটি করপোরেশনের বাইরে।
খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২৯ নভেম্বর নগরের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের ২০টি মৌজা সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করতে প্রথম প্রস্তাব পাঠানো হয়। বিভিন্ন জটিলতায় ওই কাজে তখন অগ্রগতি হয়নি। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর নগরের সীমান্তবর্তী এলাকায় হরিণটানা, লবণচরা ও আড়ংঘাটা নামে নতুন তিনটি থানা স্থাপন করে খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি)। নতুন তিনটি থানা এলাকার ছয়টি মৌজা কেসিসির মধ্যে আনতে প্রস্তাব সংশোধন করা হয়। মোট ২৬টি মৌজা সিটি করপোরেশনের মধ্যে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি কেসিসির সাধারণ পরিষদ ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে সম্প্রসারণের জন্য খুলনা-১ আসনের আওতাধীন বটিয়াঘাটা উপজেলা, খুলনা-৪ আসনের আওতাধীন দিঘলিয়া উপজেলা ও খুলনা-৫ আসনের আওতাধীন ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার ২৬টি মৌজার ১১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি সীমানা বৃদ্ধির সংশোধিত প্রস্তাব খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠায় কেসিসি। কিন্তু দুই সংসদ সদস্যের আপত্তির কারণে কিছু এলাকা বাদ দিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়মানুযায়ী সীমানা বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সেখান থেকে ২০১৪ সালের নভেম্বরে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মতামত জানতে চিঠি দেওয়া হয়। পরে খুলনা-১ ও ৫ আসনের সংসদ সদস্য ১২টি মৌজার বিষয়ে তাঁদের আপত্তি জানান। পরে প্রস্তাব সংশোধন করে ১৪টি মৌজার ৪০ দশমিক ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা কেসিসিতে সংযুক্তির প্রস্তাব পাঠানো হয়।
কেসিসির ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয়ে ওই কাগজপত্র যাওয়ার পর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মৌজাগুলোর আরও কাগজপত্র চাওয়া হয়েছিল। চাহিদা অনুযায়ী সবই সরবরাহ করা হয়। ২০২১ সালের জুন মাসে ওই প্রস্তাব সচিব কমিটির সভায় উত্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো হয়। ওই-সংক্রান্ত একটি চিঠিও সিটি করপোরেশনের কাছে পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। কিন্তু এর পর থেকে থমকে আছে সব প্রক্রিয়া।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ-জামান প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক সিটি করপোরেশনের এলাকা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। রূপসা সেতু থেকে বাইপাস সড়ক ধরে আটরা এলাকা পর্যন্ত অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন জনবসতি গড়ে উঠছে। সব মিলিয়ে আয়তন না বাড়ায় খুলনা নগর যেন একই জায়গায় থমকে আছে।