সহস্রধারার আকুল হাতছানি

বৃষ্টি হওয়ায় প্রাণ পেয়েছে সীতাকুণ্ডের সহস্র ধারা ঝরনা ২। ঘন জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত ঝরনার সৌন্দর্যের টানে দূরদুরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকেরা। গত মঙ্গলবার বিকেলেপ্রথম আলো

রাস্তা থেকে পাহাড়ি পথ বেয়ে কিছু দূর এগোলেই শোঁ শোঁ শব্দে কানে তালা লেগে যাওয়ার জোগাড়। খানিকটা হেঁটে সামনে গেলে পাহাড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল শব্দের উৎস। বিশাল পাথুরে পাহাড়ের গা বেয়ে তীব্র বেগে নেমে আসছে ঝরনাধারা। ঝরনার আশপাশে পানির ফোঁটা একটা কুয়াশার পর্দার মতো তৈরি করেছে। ঝরনার পানি গড়িয়ে পাহাড়ের কোলে তৈরি করেছে হ্রদ। বলছি, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের সহস্রধারা ঝরনা-২–এর কথা।

দুই দিন আগেই দাপট দেখিয়ে চলে গেল ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এর প্রভাবে সীতাকুণ্ডে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। আর তাতেই জেগে উঠেছে ঝরনাগুলো। যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

সীতাকুণ্ডে মোট ছয়টি ঝরনা রয়েছে। তার মধ্যে একটি সহস্রধারা ঝরনা-২। ঝরনটিতে যেতে তেমন পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হয় না। ফলে পর্যটকদের তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। বর্ষাকালে একেবারেই কষ্ট হয় না। কারণ, সেখানে ঝরনার পানি আটকে কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করা হয়েছে। ফলে হ্রদের পানিতে নৌকা ভ্রমণ করে ঝরনায় যাওয়া যায়। এতে পর্যটকেরা পান ঝরনা ও হ্রদে ভ্রমণের অনুভূতি।

সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ছোট দারোগাহাট আসতে হবে সহস্রধারা–২ ঝরনায় যেতে হলে। বাজারে নেমে রিকশায় লবণাক্ষ পাহাড়ে যেতে সময় লাগে ২০ মিনিটের মতো। সেখানে লবণাক্ষ হ্রদ পর্যন্ত যেতে হবে। এরপর নৌকায় কিংবা হেঁটে ঝরনায় যাওয়া যায়। ঝরনায় যেতে হলে প্রবেশমূল্য হিসেবে দিতে হবে ২০ টাকা।
গত মঙ্গলবার সহস্রধারা ঝরনাটিতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হ্রদের পানি এখনো নৌকা চলার মতো হয়নি। ফলে পর্যটকদের পাহাড়ের ধার দিয়ে ঝরনার কাছে পৌঁছাতে হয়। তবে গত তিন দিন প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় পুরোদমে জেগে উঠেছে ঝরনটি। ফলে হ্রদের বাঁধের ধারে যেতেই শোঁ শোঁ শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

মঙ্গলবার বিকেলে তেমন পর্যটক ছিল না। ঝরনার কাছে গিয়ে পাঁচ তরুণকে পাওয়া গেছে। তাঁদের একজন মোহাম্মদ হানিফ। তিনি চট্টগ্রামের একটি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত। থাকেন চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর এলাকায়। তিনি ঝরনা দেখতে এসে প্রথম আলোকে বলেন, বছরের প্রথম ঝরনার নতুন পানির ছোঁয়া পাওয়ার মজাটাই আলাদা। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। তিনি বুঝে গেছেন ঝরনায় নতুন পানি আসছে। আর তা উপভোগ করতে চলে এসেছেন।

সহস্রধারা ঝরনার জলে সৃষ্ট হ্রদে নৌকা ভ্রমণ করছেন পর্যটকেরা
ফাইল ছবি

ঝরনাটি শোমোশন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান বন বিভাগ থেকে ইজারা নিয়েছে। ঝরনায় প্রবেশে প্রত্যেক পর্যটককে ২০ টাকা করে দিতে হয়। এ ছাড়া নৌকায় চেপে ঝরনার কাছে যেতে আবার আলাদা ভাড়া লাগে।

ফায়ার সার্ভিসের চার নির্দেশনা

ঝরনায় গা ভাসাতে আসা পর্যটকদের সতর্ক থাকতে বলছে ফায়ার সার্ভিস। সীতাকুণ্ডের অন্যান্য ঝরনার চেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয় এ ঝরনায়। ফায়ার সার্ভিসের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরও এ ঝরনায় ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ জন্য ঝরনাটিতে যেতে চারটি নির্দেশনা মানতে বলেছে ফায়ার সার্ভিস।

ঝরনায় যাওয়ার পথে ঘন জঙ্গল পর্যটকদের প্রকৃতির আরও কাছে নিয়ে যায়। গত মঙ্গলবার তোলা
প্রথম আলো

নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঝরনার পানিতে ও হ্রদে নৌকাভ্রমণের সময় লাইফ জ্যাকেট পরতে হবে। আর লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করতে হবে ইজারাদারকে। ইজারাদার কিংবা বন বিভাগকে সতর্কতামূলক নির্দেশনা লাগাতে হবে। আর সে নির্দেশনা মানতে হবে পর্যটকদের। সাঁতার না জানলে যেন কেউ সাঁতার কাটতে না নামেন। আর ঝরনার পাশ দিয়ে গহিন পাহাড়ে যেন কোনো পর্যটক না যান। কারণ অনেক সময় পথ হারিয়ে ফেলেন পর্যটকেরা।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঝরনাটিতে কোনো ধরনের সতর্কতামূলক নির্দেশনা নেই। নেই বোটে চড়া পর্যটকদের জন্য লাইফ জ্যাকেট। গহিন পাহাড়ে কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পর্যটক যাচ্ছেন কি না, তা তদারকি করার কোনো লোকও নেই। ফলে বারবার ওই ঝরনায় দুর্ঘটনা ঘটে।