মায়ের মুখ থেকে শুনে শুনে পড়াশোনা, জিপিএ-৫ পেয়েছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রিজওয়ান
মায়ের মুখ থেকে শুনে শুনেই পড়াশোনা করেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রিজওয়ান ইসমাম ওরফে তাসপি। এ বছর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সরকারি মুজিব কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে রিজওয়ান জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এর আগে এসএসসিতে রিজওয়ানের ফল ছিল জিপিএ-৪.৭২। জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন রিজওয়ান।
রিজওয়ানের বাবা মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া চট্টগ্রাম জিপিওতে চাকরি করেন। মা শাহনাজ পারভীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তাঁদের দুই ছেলে-মেয়েই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। শাহনাজ পারভীন বলেন, মেয়েটার সামান্য দৃষ্টিশক্তি থাকলেও ছেলে জন্মগতভাবেই পুরোপুরি দৃষ্টিহীন। মেয়ে রেজমিন ইমরোজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। বর্তমানে বার কাউন্সিলের সনদের পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন রেজমিন।
বড় বোনের মতো ছোটবেলা থেকেই রিজওয়ানের পড়াশোনার প্রতি বেশ আগ্রহ বেশি ছিল। শিক্ষক আর মায়ের মুখ থেকে শুনে শুনে রিজওয়ান পড়াশোনা করেন। রিজওয়ানের এই আগ্রহের কারণে তাঁকে চট্টগ্রামের মুরাদপুর সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুল ভর্তি করানো হয়। সেখানে আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৪১ পান তিনি। পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর আবার গ্রামের ফিরে আসেন রিজওয়ান। গ্রামে ফেরার পর তিনি মায়ের কর্মস্থল কোম্পানীগঞ্জের উত্তর চর কাঁকড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (প্রাক্-প্রাথমিক থেকে অষ্টম) ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। জেএসসি পাস করার পর রিজওয়ান কোম্পানীগঞ্জ মডেল হাইস্কুলে ভর্তি হন।
রিজওয়ান বলেন, তাঁর শিক্ষক ও সহপাঠীরা সব সময় তাঁকে পড়াশোনায় সহায়তা করেন। আর মা তো সব সময় পাশে আছেন। চাকরির পাশাপাশি তাঁর মা যতটুকু সময় পান, ওই সময় তাঁকে পড়াশোনায় সাহায্য করেন। মা পাঠ্যবই জোরে জোরে পড়লে তিনি সেটা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। এ সময় সেটা মুঠোফোনে রেকর্ডও করে রাখেন। পড়ে আবার তা শুনতেন। এভাবেই পড়াশোনা করেন তিনি। আর পরীক্ষার সময় একজন শ্রুতিলেখক তাঁকে সাহায্য করেন।
মা-বাবা আর শিক্ষক ছাড়াও রিজওয়ানের সহপাঠীরাও সব সময় তাঁকে পড়াশোনার বিষয়ে উৎসাহ দেন। রিজওয়ান বলেন, ‘আমার বন্ধু আমজাদ হোসেন ও মেহেদী হাসান সব সময় আমার পাশে ছিল। তারা আমাকে অনেক সহযোগিতা করে গেছে। মেহেদী নিজে পুলিশের চাকরির ফাঁকে বই পড়ে তা রেকর্ড করে পাঠিয়েছে। এই ঋণ কখনোই শোধ করার নয়।’
কোম্পানীগঞ্জ সরকারি মুজিব কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলা উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রিজওয়ান পড়াশোনার প্রতি প্রবল ঝোঁক। এ কারণেই তিনি সফল হয়েছেন। করোনাকালে যে কয়জন শিক্ষার্থী নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস করেছেন, রিজওয়ান ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
রিজওয়ানের ইচ্ছা, এখন তিনি ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবেন। পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চান তিনি। রিজওয়ান বলেন, নিজের অর্জিত জ্ঞান অন্যের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার সহজ মাধ্যম হলো শিক্ষকতার পেশা। এই পেশার মাধ্যমে তিনি অন্যের মধ্যে জ্ঞান বিলিয়ে দিতে চান।