স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যার ২৫ ঘণ্টা পর মামলা

মুক্তি বর্মণ
ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার বারহাট্টায় স্কুলছাত্রী মুক্তি বর্মণকে (১৫) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় মুক্তির বাবা নিখিল বর্মণ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলায় একমাত্র আসামি কাওছার মিয়া (১৮)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোকন কুমার সাহা।

এ বিষয়ে বারহাট্টা থানার ওসি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুক্তি বর্মণ হত্যার ঘটনায় কাওছার মিয়াকে একমাত্র আসামি করে নিহতের বাবা মামলা করেছেন। আটক হওয়া কাওছার মিয়াকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার কাওছারকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।’

আরও পড়ুন

এদিকে সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় নিহত মুক্তির চাচা মনোরঞ্জন বর্মণ জানান, কিছুক্ষণ হয়েছে মুক্তির মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে আনা হয়েছে। এখন সৎকারের প্রস্তুতি চলছে। মুক্তির বোন নেত্রকোনা সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী দীপা বর্মণ বলেন, ‘আমরা ছয় বোনের মধ্যে মুক্তি চতুর্থ। সে খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল। তাকে কখনো লেখাপড়া করতে তাগাদা দেওয়া লাগত না। ক্লাসে তার রোল ছিল চার। লেখাপড়া শিখে বিসিএস দিয়ে প্রশাসনে চাকরির স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। বখাটে কাওছারের দায়ের কোপে অকালে সে নিভে গেল। এভাবে আমরা তার জীবনের মুক্তি চাইনি।’

মুক্তির বড় বোন রিপা নেত্রকোনা সরকারি কলেজ থেকে এবার স্নাতক পাস করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বোনকে তো আর ফিরে পাব না। আমরা চাই কাওছারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যা দেখে আর কেউ যেন এমন কাজ করতে সাহস না পায়।’

আরও পড়ুন

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে উপজেলার ছালিপুরা এলাকায় মুক্তিকে কোপান বখাটে কাওছার মিয়া। বিকেল পাঁচটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা ওই স্কুলছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। মুক্তি উপজেলার প্রেমনগর গ্রামের নিখিল বর্মণের মেয়ে ও প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর কাওছার একই গ্রামের মো. শামসু মিয়ার ছেলে।

প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, ‘মুক্তি বর্মণ খুবই নম্র, ভদ্র্র ও মার্জিত ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে গানবাজনা জানত। কংস থিয়েটার ও উদীচীর সঙ্গে সে সম্পৃক্ত ছিল। এমনকি বিদ্যালয়ে প্রতি রোববার যে বই পড়া কর্মসূচি হয়, তাতে সে প্রায়ই পুরস্কার পেত। বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ৭৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তার রোল ছিল চার। মেধাবী এই মেয়েটিকে এমন নৃশংসভাবে খুন করার ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত হয়ে গেছি। আমরা চাই, এই ঘটনায় কাওছারের ফাঁসি হোক।’

পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা অভিযুক্ত কাওছারকে আটক করতে পেরেছি। এখন মেয়েটির পরিবার যেন ন্যায়বিচার পায়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। মেয়েটির পরিবার যেহেতু কিছুটা অসচ্ছল, তাই সৎকারের জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন