সরাইলে চুরির অভিযোগে কিশোরকে পেটানোর পর ‘বিষপানে’ মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় চুরির অভিযোগে মারধরের শিকার এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি, জাহিদুল ইসলাম ওরফে পরশ (১৭) নামের ওই কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে মারধরের শিকার হয়ে ‘বিষপান করায়’ তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে জাহিদুলের মৃত্যু হয়। সে উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের আবেদ মিয়ার ছেলে।

পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবেদ মিয়া ও তাঁর স্ত্রী সুলতানা বেগম দম্পতির ছয় ছেলেমেয়ে। এর মধ্যে পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে ওই দম্পতি ঢাকার কেরানীগঞ্জে বসবাস করেন। সেখানে তাঁরা ছোটখাটো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আবেদ মিয়ার মেজ ছেলে জাহিদুল ইসলাম থাকত নোয়াগাঁও গ্রামের বাড়িতে। ওই কিশোর পড়ালেখা করত না, সুনির্দিষ্ট কোনো পেশার সঙ্গেও যুক্ত নয়। গত বুধবার ভোরে নোয়াগাঁও গ্রামের আলমগীর মিয়ার বসতবাড়ি থেকে কিছু মালামাল চুরি হয়। গ্রামের লোকজন এর জন্য জাহিদুল ইসলামকে দায়ী করেন। বুধবার সকালে তাঁরা জাহিদুল ইসলামকে ধরে মারধর করেন। পরে বুধবার রাত ১১টার দিকে স্বজনেরা জাহিদুল ইসলামকে অসুস্থ অবস্থায় স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তার অবস্থা ভালো ছিলা না। মুখ থেকে গন্ধ এবং ফেনা বের হচ্ছিল। সঙ্গে থাকা নারী-পুরুষেরা ওই কিশোর বিষ-জাতীয় কিছু খেয়েছে বলে আমাকে অবহিত করেছিল। পরে আমরা পেট ওয়াশ করে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করি।’

এরপর গত বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে সদর হাসপাতালে ওই কিশোর মারা যায়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে ওই কিশোরের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে রাত আটটার দিকে লাশ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

জাহিদুল ইসলামের বাবা আবেদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে গ্রামের বাবু মুন্সিসহ কয়েকজন মিলে মারধর করেছে। এতে আমার ছেলে মারা গেছে। আমার ছেলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেব। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

এই কিশোর ‘মাদকাসক্ত’ বলে দাবি অভিযুক্ত বাবু মুন্সির বড় ভাই শফিক মুন্সির। তিনি বলেন, ‘সে (জাহিদুল) চুরির সঙ্গেও জড়িত ছিল। বুধবার সকালে এক বাড়িতে চুরি করে মালামাল নিয়ে পালানোর সময় লোকজন তাকে মালামালসহ আটক করে সামান্য মারধর করে। আমি তখন ঘটনাস্থলে ছিলাম। বাড়িতে গেলে তার চাচারা তাকে শাসন করেন। রাতে ক্ষোভে বিষপান করেছে বলে আমরা শুনেছি। পরে সে মারা গেছে।’

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই কিশোরের মা-বাবা, ভাই-বোন থাকেন ঢাকায়। গ্রামের বাড়িতে সে থাকত একা। তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা ছিলা না। বুধবার সকালের মারধরে ঘটনায় সে বিষ-জাতীয় কোনো ওষুধ (বড়ি) খেয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে।

ওসি বলেন, এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করবে বলে জানিয়েছে ওই কিশোরের পরিবার। তবে আজ শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ না পাওয়া গেলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।