প্রতিবন্ধী সন্তানের বেহাত ভাতা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে মা

রেহানা খাতুন তাঁর সন্তানের প্রতিবন্ধী ভাতা, অন্যান্যসহ মোট ২৩ হাজার ৩৭৩ টাকা প্রতারণার শিকার হয়ে খুইয়েছেন।

প্রতিবন্ধী সন্তানের ভাতার টাকা হারিয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ে ধরনা দিচ্ছেন মা। গতকাল শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনেপ্রথম আলো

হাতে সন্তানের প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে কার্ড হাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে মধ্যবয়সী নারী মোসা. রেহানা খাতুন (৫৫)। তিনি কাঁদতে কাঁদতে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ঝাড়ুদারের চাকরি করি। আমার প্রতিবন্ধী সন্তানের টাকাটা এভাবে নিয়া গেল। আমি এখন কী করমু।’

রেহানা খাতুন তাঁর সন্তানের প্রতিবন্ধী ভাতা, অন্যান্যসহ মোট ২৩ হাজার ৩৭৩ টাকা প্রতারণার শিকার হয়ে খুইয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়। এ সময় তিনি বলেন, তাঁর একমাত্র ছেলে মো. রাসেল (২৬) একজন বাক্‌প্রতিবন্ধী। এ ছাড়া তাঁর আরও তিনটি মেয়ে আছে। তাঁরা শ্রীপুরের মুলাইদ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই গ্রামে ডিবিএল গ্রুপের মাওনা ফ্যাশন লিমিটেড নামের একটি কারখানায় ঝাড়ুদারের কাজ করেন। বছরখানেক আগে ব্রেন টিউমারে মৃত্যু হয় তাঁর স্বামী লাল মিয়ার। এরপর পুরো সংসার চলছে তাঁর একার আয় দিয়ে।

রেহানা খাতুন ঘটনার বর্ণনায় বলেন, তাঁর সন্তান নগদ একাউন্টের মাধ্যমে নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা পান। এই টাকা তাঁর স্বামীর ব্যবহৃত একটি নগদ একাউন্টের মাধ্যমে নিয়মিত পেতেন তাঁরা। বছরখানেক আগে তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর সিমসহ মুঠোফোনটি হারিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন জটিলতায় সিম উঠাতে পারছিলেন না তিনি। প্রায় ৯ মাস বন্ধ থাকার পর গত ২৭ মার্চ সিম উত্তোলন করেন। উত্তোলনের আধা ঘণ্টার মধ্যে রাত সাড়ে ১০টায় তাঁকে একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে কল দেওয়া হয়। মুঠোফোনের অপর প্রান্ত থেকে শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আপনার ছেলের নাম রাসেল। প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়মিত পাচ্ছেন। আমি শ্রীপুর উপজেলার সমাজসেবা অফিস থেকে সমাজসেবা কর্মকর্তা বলছি। ভাতা কার্ড অনলাইনে এন্ট্রির জন্য কিছু তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে।’

রেহেনা খাতুন বলেন, ফোনের অন্য প্রান্তে থাকা সমাজসেবা কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি তাঁর সন্তানের সব তথ্য বলতে পারায় তিনি বিশ্বাস করেছিলেন। সমাজসেবা কর্মকর্তা কল দিয়েছেন নিশ্চিত হয়ে তিনি সহযোগিতা করেন। তাঁর মুঠোফোনে একটি এসএমএস পাঠানো হয়। এসএমএসে থাকা পিন কোড মুঠোফোনের অন্য প্রান্তের ব্যক্তিকে বলে দেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা ক্যাশ আউট হয়ে যায়।

রেহেনা খাতুন আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে সহযোগিতা চাইতে সমাজসেবা কার্যালয়ে পাঁচ থেকে ছয় দিন এসেছেন। কিন্তু সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। ওই কার্যালয়ের অফিস সহকারী বিদ্যুৎ রঞ্জন মল্লিক ও কর্মচারী মো. ফরিদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেই তাঁরা এ বিষয়ে কোনো সহযোগিতা না করে টালবাহানা করেন। গতকাল দুপুরে এ ঘটনায় তিনি শ্রীপুর থানায় একটি অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহায়ক বিদ্যুৎ রঞ্জন মল্লিক ও কর্মচারী মো. ফরিদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের অফিস থেকে ওই নারীকে কেউ কল করেননি। প্রতিবন্ধীর নাম-ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য বাইরে কীভাবে গেল, এমন প্রশ্নে মো. ফরিদ বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে কোনো তথ্য কোথাও দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের কিছু করারও নেই।’

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতারক চক্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তির তথ্য কীভাবে পাচ্ছে, তা আমরাও বুঝতে পারছি না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কেউ জড়িত থাকার বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমরা বিষয়টি দেখব।’