জামালপুরে সকাল থেকে শান্ত, দুপুর থেকে গোলযোগ

জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার আরমনগর কামিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে নারী ভোটারদের লাইন। রোববার সকাল সাড়ে নয়টায়
ছবি: প্রথম আলো

সকাল ৮টার আগেই কেন্দ্রের সামনে ভোটারদের ভিড়। ৮টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত মোটামুটি বিভিন্ন কেন্দ্রেই ছিল ভোটারদের দীর্ঘ সারি। তবে দুপুরের পর থেকে দু-একটি কেন্দ্রে গোলযোগ দেখা দেয়। দুটি আসনের তিন প্রার্থী জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে জামালপুর-২ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা আল মাহমুদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের মধ্যে পড়েছে পলবান্ধা ইউনিয়ন। এটি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের ইউনিয়ন। বেলা ১১টার দিকে ইউনিয়নের বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের চারপাশে মানুষের ভিড়। তবে কেন্দ্রের মাঠ একদম ফাঁকা। ভোটারের কোনো সারি নেই। তবে কেন্দ্রের কক্ষগুলোর বারান্দায় পুরুষ ভোটারের লাইন ছিল। পুরো কেন্দ্রই প্রতিমন্ত্রীর লোকজনদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শাহীনুজ্জামানের (কাঁচি মার্কা) লোকজন ওই কেন্দ্রে নৌকা মার্কায় জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ করেন।

একই ইউনিয়নের সিরাজাবাদ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের অবস্থাও একই রকম। কেন্দ্রের পুরো নিয়ন্ত্রণ নৌকা মার্কার লোকজনদের। এখানেও জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘এটা প্রতিমন্ত্রীর একদম নিজের কেন্দ্র। এখানে অন্য কারও শক্তি দেখানোর সুযোগ নেই। এখানে কিছুটা জাল ভোট দেওয়া হচ্ছে। পুলাপান মানতে চায় না। তাই কিছুটা জাল ভোট দিয়েছে।’

এই আসনের গাইবান্ধা ইউনিয়নের মরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও নৌকার পক্ষে জাল ভোট দেওয়া হয়। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শাহীনুজ্জামান জাল ভোট দেওয়ার সময় হাতেনাতে একজনকে ধরেন। এ নিয়ে ওই কেন্দ্রে কিছুটা হট্টগোল হয়।

শাহীনুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, পলবান্ধা ইউনিয়নের চারটি কেন্দ্রে নৌকা মার্কার পক্ষে ব্যাপক জাল ভোট দেওয়া হয়। স্থানীয় প্রশাসনকে নানাভাবে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এককথায় এ আসনে নৌকা মার্কার লোকজন একক আধিপত্য বিস্তার করেন।

জামালপুর-৫ (সদর) আসনের শরিফপুর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নেই। রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। এ বিষয়ে ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাকসুদুর রহমান আনসারী বলেন, কোনো কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়নি এবং কোথাও জাল ভোট দেওয়া হয়নি। যখন জাতীয় পার্টির প্রার্থী বুঝতে পারছেন ১০ হাজার ভোটও পাবেন না, তখন সম্মান বাঁচাতে ওই সব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।

এদিকে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া, কেন্দ্র দখল করে নিয়ে নৌকার পক্ষে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ এনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা আল মাহমুদ বেলা ২টার দিকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি বলেন, উপজেলার ৯২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩০টি ভোটকেন্দ্রে লাঙ্গল প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। এরপর নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা সিল মারেন। তিনি ওই আসনে আবারও পুনরায় নির্বাচনের দাবি করেন।

জামালপুর-৫ (সদর) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. জাকির হোসেন খান ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রেজাউল করিমও ভোট কারচুপির অভিযোগ করেছেন। এ আসনের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি কম। সদর উপজেলার শরিফপুর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে দুই ঘণ্টায় মাত্র ৩৬৩টি ভোট পড়ে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কেন্দ্রটি একদম ফাঁকা পড়েছিল। হঠাৎ দু-একজন এসে ভোট দিচ্ছেন।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, বেলা দেড়টার দিকে সদর উপজেলার ইটাইল ইউনিয়নের জাগির মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটিতে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ওই কেন্দ্র থেকে ৪২টি ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়। পরে কেন্দ্রটির ভোট গ্রহণ স্থগিত করে দেওয়া হয়। প্রায় একই সময় তুলসীরচর ইউনিয়নের কাজিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে মারামারি হয়।

এই আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। ওই (ঈগল) প্রার্থীর এজেন্টরা অনেক জায়গা থেকে ইচ্ছা করেই বেরিয়ে যান। ওই প্রার্থী যখন বুঝতে পারছেন ভোটাররা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তখন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তাঁর এজেন্টদের সরিয়ে নিয়েছেন।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান বলেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। কয়েকটি স্থানে ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছিল। সেগুলো তাঁরা সমাধান করেছেন। একটি কেন্দ্রে সমস্যা হয়েছিল। সেই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ তাঁরা স্থগিত করে দিয়েছেন।