কালো পতাকা হাতে সড়কে শিক্ষার্থীরা, কাঁদতে কাঁদতে বিচার চাইলেন বাবা

যশোরের শার্শা উপজেলায় ট্রাকচাপায় মরিয়ম মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী আনিকা আক্তারের মৃত্যুর ঘটনায় মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সামনে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের শার্শা উপজেলায় ট্রাকচাপায় মরিয়ম মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী আনিকা আক্তার (১৩) নিহত হওয়ার ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। আজ রোববার সকালে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সামনে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা এ কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে সন্তান ‘হত্যার’ বিচার চান আলমগীর হোসেন।

আনিকা আক্তার মরিয়ম মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। সে উপজেলার বড় আঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিল।

রোববার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিদ্যালয় থেকে একটি শোকমিছিল বের হয়। যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে সকাল ১০টার দিকে মিছিলটি বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় সেখানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। কর্মসূচিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ হাজারখানেক মানুষ অংশ নেয়। এ সময় অনেক শিক্ষার্থীর হাতে কালো পতাকা এবং ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘মায়ের কোল শূন্য হওয়ার বিচার চাই’, ‘বেনাপোলে সড়কপথের অব্যবস্থাপনার অবসান চাই’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রমজান আলী, সহকারী প্রধান শিক্ষক ইনতাজুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুশফিকা নাজনীন, বর্তমান শিক্ষার্থী শামসুন্নাহার, শেখ কণিকা, নিহত আনিকা আক্তার শরিফার বাবা আলমগীর হোসেন প্রমুখ। বক্তব্য দেওয়ার একপর্যায়ে আলমগীর হোসেন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি তাঁর মেয়ে হত্যার বিচার চান।

প্রধান শিক্ষক রমজান আলী বলেন, আনিকা আক্তার মেধাবী ছাত্রী ছিল। তার মৃত্যুতে সবাই শোকাহত। তিনি তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

কালো পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

সহকারী প্রধান শিক্ষক ইনতাজুল ইসলাম বলেন, বেনাপোল বন্দরের জায়গাসংকটের কারণে ভারতে রপ্তানিমুখী ট্রাক টার্মিনালটি এখন ক্রেন ও ফর্কলিফটের গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে বেনাপোলের প্রধান সড়কটির দুই কিলোমিটার জায়গাজুড়ে প্রতিনিয়ত রাখা হচ্ছে শত শত ট্রাক। স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও এলাকার সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

থানা-পুলিশ জানায়, গত বুধবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বড় আঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক পার হওয়ার সময় একটি ট্রাক আনিকাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে সে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় বেনাপোল বন্দর থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ চালককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। ট্রাকটিও জব্দ করা হয়েছে।