বিস্তীর্ণ ধানখেতের মাঝে এনামূলের শস্যচিত্র

গাজীপুরের শ্রীপুরের বেকাশাহরা গ্রামে নিজের জমিতে এনামূলের শস্যচিত্র। মঙ্গলবার বিকেলেছবি: প্রথম আলো

যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ ধানখেত। বিশাল সবুজ মাঠের মাঝখানে হঠাৎ বেগুনি রঙের ফসলে চোখ আটকে যায়। সেখানে দুই রঙের ধানগাছ দিয়ে ফুটিয়ে তোল হয়েছে হৃদয়ের চিহ্ন।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেকাশাহরা গ্রামে এমন শস্যচিত্র করেছেন স্থানীয় কৃষক ও পান-সুপারি ব্যবসায়ী এনামূল হক (৪২)। তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘ভালোবাসা’। এনামূল ওই গ্রামের আবদুল আউয়ালের ছেলে। স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার।

২০২২ সাল থেকে এনামূল নিয়মিত তাঁর জমিতে শস্যচিত্র তৈরি করছেন। শুরুতে ধানগাছ দিয়ে ‘মা’ শব্দের শস্যচিত্র করেছিলেন। পরের বছর ২০২৩ সালে একই জমিতে গড়েন শস্যচিত্র ‘জাতীয় পতাকা’। এবার তিনি হৃদয়ের চিহ্নের আদলে গড়েছেন শস্যচিত্র ‘ভালোবাসা’।

২০২২ সাল থেকে এনামূল নিয়মিত তাঁর জমিতে শস্যচিত্র তৈরি করছেন
ছবি: প্রথম আলো

এনামূলের এই শস্যচিত্র দেখতে দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন লোকজন আসছেন। বিশেষ করে বিকেলে দর্শনার্থীর সংখ্যা থাকে সবচেয়ে বেশি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দর্শনার্থীরা নিজেদের মুঠোফোনে শস্যচিত্রের ছবি তুলছেন। অনেকেই ভিডিও করছেন।

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিবরবাড়ি থেকে আসা দর্শনার্থী মো. আবদুল ওয়াহাব বলেন, গত বছর এনামূলের করা শষ্যচিত্র ‘জাতীয় পতাকা’ দেখতে এসেছিলেন। এ বছরও এসেছেন।

শ্রীপুরের বারতোপা থেকে আসা ইকবাল হোসেন বলেন, একজন শৌখিন মানুষের ধানগাছ দিয়ে বানানো এমন শিল্পকর্ম দেখতে ভালো লাগছে। একজন সাধারণ মানুষের এমন উদ্যোগের খুব প্রশংসা করলেন গাজীপুর সদরের ভবানীপুর এলাকার শফিকুল ইসলাম।

নিতান্তই শখ থেকে এমন শস্যচিত্র তৈরি করেন বলে জানালেন এনামূল হক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘মানুষ আমার তৈরি শস্যচিত্র দেখতে আসে। এতে যে আনন্দ, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি উৎসাহ পাই।’ কীভাবে এমন শস্যচিত্র করেছেন, তা জানতে চাইলে এনামূল বলেন, এবারের শস্যচিত্র তৈরিতে তিনি ব্যবহার করেছেন বেগুনি ও বঙ্গবন্ধু জাতের দুই ধরনের ধানের বীজ। প্রথমে জমিতে দড়ি দিয়ে কাঠামো তৈরি করেন। এরপর সময় নিয়ে নিখুঁতভাবে সেখানে রোপণ করেন ধানের চারা।

এনামূল হক বলেন, ২০২১ সালে তিনি নিজের আধা বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো বেগুনি রঙের ধান চাষ করেন। তখন এই রঙিন ধান দিয়ে ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছা জাগে। সেই ভাবনা থেকেই পরের বছর থেকে তিনি শস্যচিত্র করছেন। প্রতিবছর এটা করে যেতে চান তিনি।

রঙিন ধান দিয়ে ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছা থেকে এনামূল এমন শস্যচিত্র করেন
ছবি: প্রথম আলো

এ উদ্যোগের বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বলেন, ‘কৃষক এনামূলের শস্যচিত্রের কথা শুনেছি। এমন উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়।’