বগুড়ায় শত বছরের ‘বকচর’ মাছের মেলা
প্রতিবছর মাঘ মাসের তৃতীয় সপ্তাহের বগুড়ার ধুনটে শত বছরের ‘বকচর’ মাছের মেলা বসে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। আজ বুধবার উপজেলার হেউডনগর-কোদলাপাড়া এলাকায় এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলা উপলক্ষে সপ্তাহখানেক আগেই জামাতা ও স্বজনদের দাওয়াত করেন স্থানীয়রা।
এই মেলার প্রধান আকর্ষণ মাছ। তবে এর সঙ্গে বিভিন্ন সামগ্রী কিনতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। সব মিলিয়ে হাজারো মানুষের প্রাণের মেলবন্ধন হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী ‘বকচর’ মেলা। দিনব্যাপী মেলা হলেও রেশ থাকে সপ্তাহখানেক।
আজ সকালে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই মেলায় মানুষের ভিড়। মেলার বেশির ভাগ জায়গা মাছ ব্যবসায়ীদের দখলে। এর মধ্যে আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। এ ছাড়া পণ্যের পসরা নিয়ে এসেছেন আরও নানা গ্রামের ব্যবসায়ীরা। মাছ, মিষ্টান্ন, খেলনা, চুড়ি, ফিতা, আলতা থেকে ঘর-গৃহস্থালির বিচিত্র জিনিসপত্রের বিক্রিও হচ্ছে দেদারসে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে নাগরদোলা।
মেলায় নদীর বোয়াল মাছ এনেছেন ব্যবসায়ী আবদুল জলিল। সেই বোয়াল মাছ ঘিরে ক্রেতারা ভিড় করছেন। মাছটি কেনার জন্য অনেকেই দরদাম করছেন। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত মাছটি বেচাকেনা হয়নি।
বকচরের মেলায় এসেছেন ওষুধ ব্যবসায়ী আবদুল ওহাব। একটি বড় মাছ কেনার জন্য দরদাম করছেন তিনি। মেলায় মাছে দামে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। একদিনে মেলা হলেও আশপাশের গ্রামে রেশ থাকে প্রায় সপ্তাহজুড়েই।
মেলা উপলক্ষে ঢাকা থেকে বেড়াতে এসেছেন মাহবুব রহমান ও তাজমিন দম্পতি। মাহবুব রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামবাংলার প্রতিটি মেলাই বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। বকচর মেলার সঙ্গেও সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে। তাই এ মেলা দেখতে তিনি ঢাকা শহর থেকে এসেছেন। এক দিনের মেলায় এত মানুষের সমাগম তিনি অতীতে কোনো মেলায় দেখেননি। অন্য কোনো মেলায় এত বড় বড় মাছ দেখার সৌভাগ্যও হয়নি তাঁর। মেলায় এসে বড় একটি বোয়াল মাছ দেখেই আকৃষ্ট হয়েছেন তিনি। বিক্রেতা ১৩ কেজি ওজনের বোয়াল মাছটির দাম হেঁকেছেন প্রায় ২৮ হাজার ৬০০ টাকা। মাছটির কিনে নেওয়ার জন্য দাম বলেছেন প্রতি কেজি ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু দরদামে না মেলায় মাছটি তখনো তিনি কিনতে পারেননি।
বকচর মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য আবু সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, মেলাটি প্রায় দেড় শ বছরের ঐতিহ্য। এটা মূলত জামাই মেলা। মেলার ঐতিহ্য মাছ মিষ্টি ও অন্যান্য সামগ্রী। মেলার প্রসারতা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। মেলায় প্রচুর বেচাকেনা হয় মাছ ও মিষ্টি। মেলার পরিবেশ সুন্দর রাখার চেষ্টা করছি। সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক দোকান বসেছে। মেলার উপলক্ষে আশপাশের প্রায় ২০ গ্রামে উৎসব ছড়িয়ে পড়ে।