মঞ্চে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি না থাকায় বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পণ্ড

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পণ্ড হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে নাটোরের গুরুদাসপুর বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজে মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

মঞ্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি না থাকায় নাটোরের গুরুদাসপুর বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পণ্ড করে দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কলেজ মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

কলেজটির কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলেজটির প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীকে বিদায় সংবর্ধনা দিতে কলেজের মাঠে মঞ্চ তৈরি করে অতিথি এবং সামনে শামিয়ানা টাঙিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য চেয়ার রাখা হয়। শিক্ষার্থীরা তাঁদের আসনও গ্রহণ করেন। অতিথিদের বরণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতিও নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর আধা ঘণ্টা আগে প্রধান অতিথি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুল কুদ্দুস অনুষ্ঠানস্থলে এসে দেখেন মঞ্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নেই। মুহূর্তেই অনুষ্ঠান স্থলত্যাগ করেন তিনি। এ ঘটনায় কলেজ ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষকও লাঞ্ছিত হয়েছেন।

এ ঘটনায় আজ দুপুরে নিজ কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলন করে কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক একরামুল হক বলেন, বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ঘিরে অনেক ব্যস্ততার মধ্যে সময় কেটেছে তাঁর। অনুষ্ঠান স্থলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙাতে ভুলে গিয়েছিলেন। এটা দুঃখজনক। তবে সময় করে আবারও ত্রুটিমুক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন।

অনুষ্ঠানে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহম্মেদ ও পুলিশ সুপার সাইফুর রহমানকে অতিথি করা হয়েছিল। তাঁরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। এদিকে সংবর্ধনা মঞ্চে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার না করার ঘটনা, সংসদ সদস্যের অনুষ্ঠান বর্জন করার প্রতিবাদে এবং অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ করেছে কলেজ, পৌর ও উপজেলা ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের এমন কার্যক্রমে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাস। ভয়ে ছাত্রছাত্রীরা দ্রুত কলেজ ত্যাগ করেন। শিক্ষকেরাও উৎকণ্ঠায় পড়েন পরিস্থিতি সামাল দিতে। এ বিষয়ে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আজ বেলা ১১টার দিকে কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে মাঠ ভরে গেছে। অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরির লোকজন শামিয়ানা খুলে পেতে রাখা চেয়ারগুলো গুছিয়ে নিচ্ছেন।

ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, কলেজটি একজন শহীদের নামে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমান সরকারের সময়ে কলেজটি সরকারীকরণ ও কাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সেই কলেজের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি না থাকার ঘটনাটি উদ্দেশ্যমূলক। এ জন্য অধ্যক্ষের আদর্শিক সমস্যাকে দায়ী করছে ছাত্রলীগ।

কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমানের সভাপতিত্বে ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাশীষ কবির, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক জুলফিকার রহমান, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। তাঁরা অধ্যক্ষের অপসারণ ও শাস্তি দাবি করেন।

ঘটনাটি দুঃখজনক মন্তব্য করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুস বলেন, কলেজটি তাঁর নেতৃত্বে একজন শহীদের নামে ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই কলেজের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি নেই। ব্যবহার করা হয়নি জাতীয় স্লোগান। যেখানে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা নেই, সেখানে তাঁর মর্যাদার কী আছে? বাধ্য হয়ে অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন তিনি।

পরিস্থিতি সম্পর্কে কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলেন, অনেক উদ্দীপনা নিয়ে সংবর্ধনা নিতে কলেজে উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু কেন কী কারণে অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে গেল বুঝে উঠতে পারছেন না। দুঃখ–বেদনা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাঁদের।