বেনাপোল কাস্টমসে দুদকের অভিযান, ফেরার পথে দুদকের কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ
যশোরের বেনাপোল কাস্টম হাউসে অভিযানে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। এ সময় তাঁদের গাড়িটি প্রায় ৩০ মিনিট আটকে রাখা হয়। গতকাল সোমবার রাতে বেনাপোল কাস্টম হাউস চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে বিকেলে কাস্টম হাউসে অভিযানে গিয়ে দুদক কর্মকর্তারা এক ব্যক্তিকে ঘুষের ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকাসহ আটক করেন। আটক হাসিবুর রহমান স্থানীয়ভাবে ‘এনজিও সদস্য’ নামে পরিচিত। তিনি কাস্টস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারের ঘুষের টাকা সংগ্রহকারী বলে দাবি করেছেন দুদক কর্মকর্তারা।
দুদক সূত্র জানায়, বেনাপোল কাস্টম হাউসের কিছু কর্মকর্তা আমদানি পণ্যে সঠিকভাবে শুল্কায়ন করছেন না, ঘুষ নিয়ে আমদানি পণ্যে শুল্কায়ন করা হয়—এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার বিকেলে দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল বেনাপোল কাস্টম হাউসে অভিযান চালায়। দুদক কর্মকর্তারা বিকেল চারটার দিকে বেনাপোল কাস্টম হাউসের প্রধান ফটক থেকে হাসিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেন। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে হাসিবুর রহমান ওই টাকা বেনাপোল কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারের ঘুষের বলে জানান। তাঁকে নিয়ে কাস্টম হাউসের চতুর্থ তলায় শামীমা আক্তারের কক্ষে যান দুদক কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শামীমা আক্তার স্বীকার করেন টাকাগুলো হাসিবুর তাঁকে দেওয়ার জন্য আনছিলেন। সেখানে কাস্টমস কমিশনার খালেদ মোহাম্মাদ আবু হোসেনের সামনে শামীমা আক্তার ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য খালেদ মোহাম্মাদ আবু হোসেনের মুঠোফোন একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সূত্র জানায়, জব্দ করা টাকার নম্বর মিলিয়ে তালিকাবদ্ধ করতে রাত সাড়ে আটটা বেজে যায়। এ সময় দুদক কর্মকর্তারা রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারের কাছ মুচলেকা নিয়ে তাঁকে কাস্টমস কমিশনারের জিম্মায় রেখে বেরিয়ে কাস্টম হাউসের প্রধান ফটকের সামনে রাখা গাড়িতে তাঁরা ওঠেন। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে শতাধিক লোক গাড়িটি আটকে রাখেন। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন কর্মকর্তারা। খবর পেয়ে প্রায় ৩০ মিনিট পর রাত সোয়া নয়টার দিকে বেনাপোল বন্দর থানা থেকে পুলিশ কাস্টম হাউসে গিয়ে কর্মকর্তাদের উদ্ধার করে। এরপর পুলিশি প্রহরায় গাড়িটি যশোরের উদ্দেশ্যে বেনাপোল কাস্টম হাউস ছেড়ে যায়।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বেনাপোল কাস্টম হাউসের মূল ফটকের সামনে দুদকের গাড়িটি আটকে রাখা হয়েছে। গাড়ির মধ্যে বসে আছেন দুদকের কর্মকর্তারা।
এ ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কাস্টমস কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ব্রিফিং করছেন দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন। ব্রিফিংয়ের শেষ পর্যায়ে উপস্থিত সাংবাদিকেরা তাঁকে ঘিরে ‘দুর্নীতিবাজ’ ও ‘ঘুষখোর’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাঁকে বিমর্ষ অবস্থায় দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যেতে দেখা যায়।
অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বেনাপোল কাস্টম হাউসের মূল ফটকের সামনে দুদকের গাড়িটি আটকে রাখা হয়েছে। গাড়ির মধ্যে বসে আছেন দুদকের কর্মকর্তারা। অবরোধকারীরা গাড়িটির চারপাশে অবস্থান করছেন। এ সময় দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাঁদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারের সহযোগী হাসিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা গাড়ির মধ্যে প্রায় ৩০ মিনিট অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। পরে পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে। শামীমা আক্তারের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁকে কাস্টমস কমিশনারের জিম্মায় রেখে আসা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জব্দ করা টাকা আদালতের অনুমতি নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারের মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।