সুনামগঞ্জের আকাশে রোদ, নদীতে পানি কমায় স্বস্তি

সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় নদ-নদীর পানি কমছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মধ্যবাজার এলাকায় সুরমা নদীর তীরে
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে গত দুই দিন বৃষ্টি হয়নি। আকাশে রোদ। এ সময় উজানের ঢলও কম নেমেছে। জেলার প্রধান নদী সুরমাসহ অন্যান্য নদীর পানি কমছে। এতে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। আজ বুধবার একই সময়ে পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, মূলত ভারী বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পানি কমছে। একই সঙ্গে উজানের পাহাড়ি ঢলও নেমেছে কম। আজ দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৬৫ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৫ মিলিমিটার।

ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় শুধু সুরমা নয়; জেলার যাদুকাটা, বৌলাই, নলজুর, কুশিয়ারা, কালনী, পাটলাই, চলতি, রক্তিসহ সব নদ–নদীর পানিই কমছে। একইভাবে ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে যেসব গ্রামীণ রাস্তা প্লাবিত হয়েছিল, সেসব রাস্তা থেকেও পানি নামছে।

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে জেলার সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়। এতে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অনেকের মধ্যে গত বছরের মতো ভয়াবহ বন্যা হবে কি না, এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। তবে মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকেনি। গত দুদিন বৃষ্টি না হওয়া এবং পানি কমায় মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আকরাম উদ্দিন বলেন, ‘টানা বৃষ্টির সঙ্গে যেভাবে পানি বাড়ছিল, তাতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। শুধু আমি নয়, সবার মনেই এই ভয় ছিল। এখন পানি কমতে শুরু করায় মন থেকে সেই ভয় দূর হয়েছে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাস নেই। বৃষ্টি হলে সেটা হবে বর্ষা মৌসুমের স্বাভাবিক বৃষ্টির মতো।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, পানি অনেক কমে গেছে। আরও কমবে। বড় বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, এখন সুনামগঞ্জের নদী ও হাওরে যে পানি আছে, সেটা এই এলাকার জন্য অনেকটা স্বাভাবিক বর্ষা। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি, উজানের পাহাড়ি ঢলে বন্যার একটা আশঙ্কা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি।

সুনামগঞ্জে গত বছরের জুনে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল। অতি বর্ষণের সঙ্গে উজানের ঢল নেমেছিল কয়েক দিন। শহরে ঢলের পানি ঢুকে গত বছরের ১৬ জুন সকালে। সন্ধ্যা নামার আগেই পুরো শহর প্লাবিত হয়ে যায়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জ। বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট–সেবা। সুনামগঞ্জ চার দিন সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। সরকারি হিসাবে জেলার কমবেশি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। মারা যান ১৫ জন। ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় ৫০ হাজার।