মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদে অভিযান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী। রোববার দুপুরে শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদে অভিযানে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী। এ সময় তিনি তাঁর নিজের বাড়ির পুকুর থেকে সন্ত্রাসীরা জোর করে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি বারবার জানালেও তাঁরা যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

মনজুর আহমেদ চৌধুরীর বাড়ি শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া এলাকায়। সেখানে ব্যক্তিমালিকানাধীন তাঁর একটি পুকুর আছে। ওই পুকুর থেকে একটি প্রভাবশালী মহল ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার বলার পরেও পুকুর থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আজ রোববার শিবচরের দত্তপাড়া ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদের বিভিন্ন অংশে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগে ৯ জন আটক করা হয়। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের সবাইকে নিয়ে এই অভিযানে যাব। শিবচর থানার ওসি সাহেব অসুস্থ। জেলা প্রশাসনকে বলার পরেও তাঁরা কেউ আসেন নাই।’ তিনি বলেন, ‘দত্তপাড়ায় আড়িয়াল খাঁ নদের সঙ্গে তিনটি সেতু। একটি রেলসেতু এবং একটি নতুন, অন্যটি পুরোনো সেতু। সেতুর চারপাশ খুবই সংবেদনশীল জায়গা। আড়িয়াল খাঁ অত্যন্ত ভাঙনপ্রবণ একটি নদ। এখানে একটি সন্ত্রাসী চক্র বিভিন্ন রকমের ধোঁকাবাজি করে নদীর বালু বিক্রি করছে। এটা আমরা কয়েক দিন আগে জানতে পেরেছি। জানার পরেই আমরা সেই ভিডিও ইউএনওকে দিয়েছিলাম। পরে ইউএনও এসি ল্যান্ডকে পাঠিয়েছিলেন সেখানে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। সন্ত্রাসীরা ড্রেজিং করেই গেছে। নদে এমন ড্রেজিংয়ের কারণে রেলসেতুর ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে—এটা ভেবেই মূলত আমরা অভিযানে এসেছি।’

অভিযানে আসার তিন দিন আগের ঘটনা উল্লেখ করে মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত সহকারী নুর আলম। তাঁকে আমার গ্রামের বাড়ির পুকুরটি দেখতে পাঠিয়েছিলাম। এই পুকুরে কয়েকজন সন্ত্রাসী প্রকৃতির রাজনৈতিক লোক জোর করে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। তাঁদের বহুবার নিষেধ করেছি। কিন্তু তাঁরা কোনো কথাই শোনেন না। ৮ জুন নুর আলম তাঁদের ফের নিষেধ করায় তাঁরা তাঁকে ধাওয়া করে জবাই করতে গেছে। পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে ঠিকই কিন্তু অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেনি।’

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি এত দুর্বল হয়, তাহলে তো মানুষের জানমাল নিরাপদে থাকবে না। আজকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত পুকুরে জোর করে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছে, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন কিছুই করে না। তারা কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। তাহলে অন্য জায়গায় কী হবে? যাকে জবাই করতে গিয়েছিল, সে মামলা করবে। মামলার পরে কী হয়, সেটা দেখব? পরে তা আমি জাতির সামনে তুলে ধরব। প্রশাসনের সব অর্ডার আমাদের কাছে অডিও-ভিডিও রেকর্ড আছে।’

অভিযানকালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রিয়াজুল রহমান ও থানা-পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জানতে চাইলে রিয়াজুল রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু তোলায় অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁরা থানায় আছেন।’ নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি কী বলছেন, জানি না। তবে আমরা তাঁর সব কথা গুরুত্বের সঙ্গে দেখি ও অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নিই। তিনি অভিযোগ দেওয়ায় এক ড্রেজারের মালিককে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেছি। ১৫ জনের মতো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছি। এখন তাঁরা জামিনে গেলে সেটা তো আদালতের ব্যাপার। এরপর তিনি এমন কথা কেন বলেছেন তা ইউএনও এবং ডিসি স্যার বলতে পারবেন।’

এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেনি।