৪০ বছর ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর অতিথি

দোকানে আসা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে চা পান করাচ্ছেন আছর আলী। গত বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বাজিতপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

১৯৮২ সালে নিজ বাড়ির সামনে ছোট একটি চায়ের দোকান দেন আছর আলী। প্রথম দিনই ঘোষণা দেন, তাঁর দোকানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চা–পান খেতে টাকা দিতে হবে না। এর পর থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এলেই তিনি সম্মান জানিয়ে তাঁদের বসার ব্যবস্থা করেন। তাঁরা চা, পান, কেক—যা–ই খান না কেন, কোনো পয়সা নেন না আছর আলী। এ আতিথেয়তা ৪০ বছর ধরে অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

আছর আলী টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের বাসিন্দা। ওই গ্রামের মোড়ে নিজ বাড়ির সামনে তাঁর চায়ের দোকান। এলাকায় দোকানটি পরিচিতি পেয়েছে ‘মুক্তিসেবা টি স্টল’ নামে।

আছর আলী প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল ১০–১১ বছর। সে সময় দেখেছেন তাঁদের এলাকায় অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধে গেছেন। অনেকে ফিরে এসেছেন, আবার অনেকে শহীদ হয়েছেন। অনেকে যুদ্ধে আহত হয়ে করেছেন পঙ্গুত্ব বরণ। কিশোর বয়সে বিষয়টি তাঁর মনে দাগ কাটে। এরপর স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেখলে সম্মান জানাতেন তিনি। হাতে টাকাপয়সা থাকলে তিনি তাঁদের চা বা পান খাওয়াতেন।

ধনবাড়ী উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বাজিতপুর গ্রাম। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাজিতপুর গ্রামে গিয়ে যাঁকেই জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিল, তিনিই দেখিয়ে দিচ্ছিলেন আছর আলীর চায়ের দোকানে যাওয়ার পথ।

আছর আলীর চায়ের দোকানের সাইনবোর্ড
ছবি: প্রথম আলো

বেলা দেড়টার দিকে সেখানে পৌঁছে দেখা যায়, চার–পাঁচজন চা খাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান আলী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ চা পান করে জোর করে টাকা দিতে চাইলেও নেন না আছর আলী। প্রতিদিনই কোনো না কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা আসেন তাঁর চায়ের দোকানে। আছর আলী তাঁদের সম্মানের সঙ্গে সেবা দেন।

তিন বছর আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় আছর আলীর। এতে তাঁর এক পাশ অবশ হয়ে যায়। এখন অন্যের সহায়তা নিয়ে চায়ের দোকানটি পরিচালনা করেন। তাঁর দুই ছেলে ঢাকায় পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ করেন।

আছর আলীর আতিথেয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের সরকারি এম এম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামসুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ছোট্ট একটি চায়ের দোকান চালান আছর আলী। লাভ হয় অল্প টাকা। অথচ চার দশক ধরে বিনা পয়সায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চা–পান খাওয়াচ্ছেন তিনি। অনেক বড় হৃদয়ের মানুষ আছর আলী।

আছর আলী মনে করেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ কোনো দিন শোধ করা যাবে না। তাই যত দিন বেঁচে থাকবেন, তাঁদের আপ্যায়ন করে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।