ছুটি না পেয়ে অসুস্থ নারী শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ, ৪০ হাজার টাকায় মীমাংসা

নারী শ্রমিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন কারখানার অন্য শ্রমিকেরা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গাজীপুর সদর উপজেলার বিকেবাড়ী তালতলী এলাকায় সিলভার কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের সামনেছবি: সংগৃহীত

গাজীপুর সদর উপজেলায় একটি পোশাক কারখানায় অসুস্থ হওয়ার পর ছুটি না পেয়ে একজন নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান তিনি। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন কারখানার অন্য শ্রমিকেরা। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ নিহত নারীর পরিবারের সঙ্গে ৪০ হাজার টাকায় বিষয়টি মীমাংসা করে।

নিহত শ্রমিকের নাম হাসিনা বেগম (৩৫)। তিনি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবহাট গ্রামের ভাসান আলীর মেয়ে। গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ী তালতলী এলাকায় সিলভার কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামের একটি পোশাক তৈরির কারখানায় সুইং সেকশনে কাজ করতেন হাসিনা বেগম। কারখানার পাশেই একটি ভাড়া বাসায় তিনি থাকতেন।

কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য দিনের মতো হাসিনা বেগম গতকাল দুপুরের পালায় কারখানার কাজে যোগ দেন। কাজ করার সময় তিনি অসুস্থ বোধ করলে কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি চান। কিন্তু সেখানে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা তাঁকে ছুটি না দিয়ে কাজ করতে বলেন। তিনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে কারখানা ছুটি হওয়ার পর তাঁকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কারখানার অন্য শ্রমিকেরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। জয়দেবপুর থানা থেকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারখানার ভেতরে কাজ করার সময় ওই শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে কারখানার নিজস্ব চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কারখানার ছুটির পর তিনি স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে গিয়ে সেখানে মারা যান। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলেও পরে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনায় বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।

কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহত নারী আমাদের কারখানার একজন ভালো শ্রমিক ছিলেন। তাঁকে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। তিনি বাড়িতে গিয়ে মারা গেছেন। তাঁর পরিবারকে তাৎক্ষণিক ৪০ হাজার টাকা, লাশ গ্রামের বাড়িতে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। কারখানার পরিবেশও শান্ত আছে।’ তিনি আরও বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী যত রকমের সুবিধা আছে, সবই ওই শ্রমিকের পরিবার পাবে। তাঁর করা বিমার টাকাও পরিবার পাবে। তাঁর মৃত্যুতে কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, রাতেই নিহত নারীর পরিবারকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ লাশ নারী শ্রমিকের গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে কারখানায় আর কোনো ঝামেলা হয়নি।